ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মাতৃভাষার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে বাংলা ও ইংরেজি

মাতৃভাষার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে বাংলা ও ইংরেজি

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কলাপাড়ার মিশ্রীপাড়ায় অবহেলায় পড়ে থাকা রাখাইনদের ভাষা শিক্ষার স্কুল সমকাল

জাকির হোসেন, আমতলী (বরগুনা)

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১০:১৪

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারী রাখাইন জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্ম মাতৃভাষা মুখে বলতে পারলেও লিখতে বা পড়তে পারে না। অনেকে রাখাইন ভাষা বলতে গিয়ে বাংলা ও ইংরেজির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচলন নিয়ে শঙ্কিত সম্প্রদায়টির মানুষ।

জানা গেছে, ১৭৮২ সালে মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশ থেকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী, বরগুনার তালতলী ও সদর উপজেলার বালিয়াতলীতে জঙ্গলাকীর্ণ এলাকায় বসতি স্থাপন করে রাখাইন সম্প্রদায়। ধীরে ধীরে বাঙালিরাও বসতি গড়ে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে না ওঠা ও ভাষাগত দূরত্বের কারণে দিন দিন পিছিয়ে পড়ে এ জনগোষ্ঠীর মানুষ।

বর্তমানে ৪২টি পাড়ায় আড়াই সহস্রাধিক রাখাইন পরিবার রয়েছে। তবে হাতেগোনা দুটি পাড়ায় ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে কলাপাড়ার গোড়া আমখোলাপাড়া ও তালতলীর কবিরাজপাড়া রয়েছে। তবে রয়েছে পাঠ্যপুস্তকের সংকট। এ জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় বাংলায় লেখাপড়া করতে হচ্ছে।

বাড়ি কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নেই রাখাইন ভাষার চর্চা। ফলে মাতৃভাষায় কথা বলতে পারলেও নিজেদের ভাষা পড়তে ও লিখতে পারছে না এ সম্প্রদায়ের শিশুরা। কুয়াকাটার লতাচাপলী সরকারি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্র্রেণির ছাত্রী লুমুজা রাখাইনের ভাষ্য, 'স্কুলে আমাদের ভাষা শেখানো হয় না। তাই আমরা আমাদের মাতৃভাষা শিখতে পারি না।'

কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার বাসিন্দা চিংথান রাখাইন বলেন, তাঁর ছেলে খেনজো বরিশাল সরকারি হাতেম আলী কলেজে সম্মান শ্রেণিতে ও মেয়ে মোমেসে বরিশালের বাকেরগঞ্জে পড়ছে। তারা কেউ রাখাইন ভাষা লিখতে বা পড়তে পারে না। শুধু বলতে পারে। কোনো সুযোগ না থাকায় সন্তানদের এ ভাষা শেখাতে পারছেন না। এতে তাঁদের ভাষা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

কুয়াকাটার বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ইন্দ্র বংশী ভিক্ষু বলেন, রাখাইন ভাষা শেখানোর সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ নেই। তারা সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক বা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। রোজায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময় শিশুদের বৌদ্ধ বিহারে এনে রাখাইন ভাষা শেখানোর চেষ্টা করা হয়। তবে সবাইকে আনা যায় না।

মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উত্তম ভিক্ষুু বলেন, ২০ জন রাখাইন শিশু নিয়ে ২০১৫ সালে বিহারের পাশে গোলপাতার ঘরে রাখাইন ভাষা শিক্ষা স্কুল চালু করেছিলেন। তবে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে রাখাইন ভাষা বলতে পারলেও বাংলা ও ইংরেজির মিশ্রণ থাকে।

তালতলীর আগাঠাকুরপাড়ার ভিক্ষু বারা সামি এ ভাষা সংরক্ষণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান। বেসরকারি সংগঠন শিড়ির নির্বাহী পরিচালক চানচান সওদাগর বলেন, শিশুরা রাখাইন ভাষা বলতে পারলেও লিখতে পারছে না। এটা দুঃখজনক।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, রাখাইনদের জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করছে। এ ভাষা শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা, সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

আরও পড়ুন

×