ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আরিফের বাবা-মা

একমাত্র কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় আরিফের বাবা-মা

আরিফুর রহমান

সফিকুল আলম, পঞ্চগড়

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৩ | ০৭:৪৭ | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৩ | ০৭:৪৭

সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন আরিফুর রহমান (২৭)। তিনি পঞ্চগড় জেলা শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসে ম্যানেজারের চাকরি করতেন। পাশাপাশি পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের কাজী আব্দুর রহমানের সহকারি হিসেবেও মাঝে মধ্যে তার সাথে বিয়ে পড়াতে যেতেন। দুই জায়গায় কাজের সামান্য আয় দিয়েই বাবা-মাকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন আরিফ। শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আরিফ নিহত হওয়ার পর শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তার বাবা-মা। কখনও আবার একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে হঠাৎই হাউমাউ করে কেঁদে উঠছেন।

নিহতের পরিবার জানায়, জেলা শহরের ইসলামবাগ মহল্লার আরিফুর রহমান পঞ্চগড় টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে কৃষি ডিপ্লোমা কোর্স করেছিলেন। বাবা ফরমান আলী ট্রাক্টর চালক ছিলেন। বয়সের কারণে আর গাড়ি চালাতে পারতেন না। মা আলেয়া বেগম গৃহিনী। নিহত আরিফের আয় দিয়েই পরিবারটির সব খরচ চলত। ছেলের একটা চাকরির আশায় ডোকরোপাড়া মহল্লার একমাত্র সম্বল ভিটাবাড়িটি করে চার বছর আগে একটি প্রতিষ্ঠানে টাকা দেন আরিফের বাবা। কিন্তু সেই চাকরি আর হয়নি আরিফরে। চাকরিবাবদ দেওয়া টাকা তুলতেও দীর্ঘদিন ঘুরতে হয়েছিল পরিবারটিকে। আরিফের একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে চাঁদপুরে। আরিফুর রহমান স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে একাধিক সংগঠনের (প্রথম আলো বন্ধুসভা) সাথেও জড়িত ছিলেন।

শুক্রবার রাতে শহরের ইসলামবাগ মহল্লায় আরিফের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর থেকে তার মরদেহ বাড়িতে আনার পর পরিবারের সদস্য আর সহপাঠি বন্ধুরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের নেতাদের তদারকিতে নিহতের বন্ধু ও স্থানীয়রা কাফন পড়াচ্ছিলেন। পাশেই বাবা-মাসহ স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাশ ভারি হয়ে উঠেছিল। শুক্রবার রাতভর আরিফের বাড়িতে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মী ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকার মুসুল্লিসহ স্থানীয়দের ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। দুপুর সাড়ে ১২ টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মরদেহ নামাজে জানাযার জন্য কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল।

আরিফের বাবা ফরমান আলী বলেন, আমার ছেলে কখনো কোনো রাজনীতি করেনি। প্রেসে কাজ করতো এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে বাড়ির ফেরার সময় সে আহত হয়। ছেলের আয় দিয়েই সংসার চলতো, আমার সব শেষ হয়ে গেল, বলতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন ফরমান আলী।

নিহত আরিফের বন্ধু আনভির উজ্জামান বলেন, আরিফসহ আমরা ডোকরোপাড়া এলাকায় এক সাথেই ছিলাম। আমরা প্রতিদিন এখানেই আড্ডা দেই। হঠাৎ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ধাওয়া দেয়, আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আমরা পালাতে গেলে আরিফের মাথার পেছন দিকে একটি বুলেট বিদ্ধ হয়ে সামনের কপাল দিয়ে বের হয়ে যায়। তাকে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং পরে রংপুর মেডিক্যোল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

আরিফের বন্ধু আরও বলেন, আরিফ কখনই কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। একটি প্রেসে কাজ করতো। তার আয় দিয়েই সংসার চালাতো।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পঞ্চগড় শহর। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এতে আরিফুর রহমানসহ আরেক যুবক নিহত হন।


আরও পড়ুন

×