খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন
শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফুরফুরে মেয়র খালেক

মামুন রেজা, খুলনা
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ০৫:৩৬
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত, শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল বর্তমান মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। দলের মনোনয়ন দাবি করা শক্তিশালী অন্য কেউ নেই। এদিকে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। মেয়র পদে স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল থেকে চারজন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন তালুকদার আবদুল খালেক।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল গত বছর ২১ জুলাই ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় তালুকদার খালেককে দলের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেন। শেখ জুয়েলকে ঘিরেই এখন খুলনা আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবর্তিত হয়। দলের হাইকমান্ডের সম্মতিতে তিনি এই ঘোষণা দেন।
নেতাকর্মীরা জানান, মেয়র পদে খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তবে এখন পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যার্শী প্রভাবশালী কোনো প্রার্থী নেই। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী খুলনা সফরকালে তালুকদার খালেককে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন। তাঁর প্রার্থিতার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে আছে।
এ ব্যাপারে মেয়র খালেক সমকালকে বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী। অনেক আগে থেকেই খুলনা নগরীর দুই সংসদ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছি। অন্য কে মনোনয়ন চাইবে কিংবা অন্য দল থেকে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই।’
এদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। তাঁরা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না।
মেয়র পদে এর আগে একটি নির্বাচনে বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও দুটি নির্বাচনে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এর মধ্যে মনিরুজ্জামান মনির নির্বাচন করার আগ্রহ না থাকলেও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কিছুটা আগ্রহ রয়েছে। তবে আগ্রহ থাকলেও বিএনপি নির্বাচনে না গেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না। ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে যথাক্রমে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও মনিরুজ্জামান মনিকে সরিয়ে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর থেকে মঞ্জু-মনি ও তাঁদের অনুসারীরা দলের মধ্যে একেবারেই কোণঠাসা।
সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে না গেলে আমিও নির্বাচনে যাব না।’ নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, তিনি দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী। নেতাকর্মীরা অনেকে বলছেন, আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচনেও যাওয়া উচিত। কিন্তু দল যদি চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে না যায়, তাহলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না।
গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থী থাকলেও এবার প্রার্থী দেবে কিনা তা চূড়ান্ত হয়নি। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, শিগগিরই কেন্দ্রীয় কমিটি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মহানগর সভাপতি মাওলানা আবদুল আউয়ালকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আবদুল আউয়াল জানান, তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছেন।
গত নির্বাচনে ১ হাজার ৭২ ভোট পাওয়া এসএম মুশফিকুর রহমান মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন। গত নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করলেও এবার হবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি বলেন, গতবারের নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ভোটের সংখ্যা গুনে লাভ নেই।
মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফফার বিশ্বাস জানান, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন। এ ছাড়া সামাজিক সংগঠন আগুয়ান-৭১ থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সংগঠনটির আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী। মহানগর সিপিবির সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু জানান, তিনি গতবার মেয়র নির্বাচন করলেও এবার পার্টি নির্বাচনে যাবে না।
এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা সমকালকে বলেন, প্রধান দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর মধ্যে একটি দল নির্বাচনে না গেলে সেই নির্বাচন হবে একতরফা।
২০১৮ সালের ১৫ মে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ , জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক ১ হাজার ৭২ ও সিপিবির মিজানুর রহমান বাবু ৫৩৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান।