ভিডব্লিউবি প্রকল্পে অনিয়ম
দুস্থদের চালেও ভাগ বসান জনপ্রতিনিধিরা

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ | ০২:০৩
রাজশাহীর চারঘাটে মোটা অঙ্কের টাকা বা শর্ত ছাড়া মিলছে না দু্স্থ ও অসহায় নারীদের ভিডব্লিউবির (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কার্ড। যারা দাবি করা টাকা থেকে কম দিয়েছেন তাদের কার্ড পেতে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে বলা হয়েছে। আবার অনেক নারী টাকা দিলেও তালিকায় নাম ওঠেনি।
সরেজমিনে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ৮-১০ হাজার টাকা দিতে পেরেছেন তারা প্রথম ধাপে কার্ড ও চাল পেয়েছেন। কিন্তু যারা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন তাদের ছয় মাসের চাল ইউপি সদস্যরা তুলবেন এমন চুক্তি হয়েছে। এজন্য কার্ড ও চাল বিতরণের দিন উপকারভোগীদের পরিষদ থেকে জানানো হয়নি। কিন্তু সদ্য যোগদান করা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ইউপি সদস্যদের হাতে কার্ড না দিয়ে নিজ নিজ হাতে উপকারভোগীদের মধ্যে কার্ড ও চাল বিতরণ করায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
শলুয়া ইউনিয়নের ফরিদা বেগম ও শিউলি বেগম বলেন, ১০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন ইউপি সদস্য। ৫ হাজার টাকা দেওয়ায় কার্ড হয়নি তাদের। টাকাও ফেরত দেননি। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছেন তালিকায় তাদের নাম নেই।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ছয় ইউনিয়নে ভিজিডি কর্মসূচির ২০২২-২৩ অর্থবছরে সদর ইউপিতে ২৬৮টি, সরদহে ২৪৮টি, শলুয়ায় ৩৩৫টি, ইউসুফপুরে ৩২৭টি, নিমপাড়ায় ৪০৬টি ও ভায়ালক্ষ্মীপুরে ৩৩৩টিসহ মোট ১৯১৭টি কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কথা ছিল দুই বছর মেয়াদি এ কার্ড থেকে উপকারভোগীরা প্রতি মাসে ত্রিশ কেজি করে চাল পাবেন। প্রথম মাসের চাল গত ৩০ মার্চ বিতরণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর, শলুয়া, ইউসুফপুর, নিমপাড়া ও ভায়ালক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন থেকে ২৮৬ জনের কার্ড ফেরত এসেছে। চাল নেওয়ার জন্য এসব এলাকার উপকারভোগীদের পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
নিমপাড়া ইউপির এক উপকারভোগী বলেন, ‘৫ হাজার টাকা খণ করে কার্ডের জন্য টাকা দিয়েছি। চাল বিতরণের সময় আমাকে খবর দেওয়া হয়নি। এখন শুনলাম তালিকায় আমার নাম আছে।’
এ বিষয়ে নিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘তালিকা আমি একা করিনি। তাই শতভাগ স্বচ্ছ হয়েছে কিনা বলতে পারব না।’
কথা হয় ইউসুফপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জয়পুর এলাকার আদুরী খাতুন ও শাহানাজ বেগমের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, কার্ড করে দিতে ইউপি সদস্য রবিউল তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন। বার বার তাঁর কাছে খোঁজ নিলেও কার্ডের কথা কিছুই জানাননি। কার্ড ও চাল ফেরত যাওয়ায় পর তারাও তালিকায় নাম থাকার বিষয়টি জানতে পারেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউসুফপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম জানান, কার্ডের জন্য তিনি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। তবে যারা কার্ড পাননি, আস্তে ধীরে পেয়ে যাবেন। এ ইউপির চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মাখন বলেন, ‘সবাইকে খবর দেওয়া হয়েছিল। এরপরও ৭৩ জন আসেনি। তাদের চাল পরিষদেই রাখা আছে।’
মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাশিদা পারভীন বলেন, ‘কার্ডের ছবির সঙ্গে উপকারভোগীকে মিলিয়ে দেখে চাল দেওয়া হচ্ছে। যারা উপস্থিত ছিলেন না তাদের কার্ড ফেরত এসেছে। তবে তাদের পাওয়া গেলে দুই মাসের চাল একসঙ্গে দেওয়া হবে।’
ইউএনও সোহরাব হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’