ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

শাবির ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে নৈরাজ্য

বাস-ট্রেনের টিকিট শুধু কালোবাজারে

বাস-ট্রেনের টিকিট শুধু কালোবাজারে

শনিবার সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টার ছিল প্রায় জনশূন্য; (ইনসেটে) কাগজে লিখে রাখা হয়েছে আগামী ২৬ ও ২৭ তারিখের সিট খালি নেই- সমকাল

চয়ন চৌধুরী, সিলেট

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫:১০ | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৯ | ১৫:৩৬

সরকারি চাকরির সূত্রে আবদুল হক সিলেটে থাকেন। তিন দিন ধরে সকালে সব কাজ ফেলে রেলওয়ে স্টেশনে দৌড়াচ্ছেন। ২৬ অক্টোবর রাতের ট্রেনের দুটি টিকিট কিনতে চান তিনি। এক আত্মীয় ছেলেকে নিয়ে সিলেটে আসবেন। তারা ঢাকায় ফেরার জন্যই ওই দুটি টিকিট দরকার। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও কোনো টিকিট পাননি আবদুল হক। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বাসের দুটি টিকিট কিনেছেন, তাও দ্বিগুণ দামে।

গতকাল শনিবার ভোর ৬টায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে হাজির দুই বন্ধু শাকিল ও ফরহাদ। সেই ২৬ অক্টোবর রাতের ট্রেনে চট্টগ্রামে যাওয়ার  টিকিট চাই তাদের। দুপুর ১টা পর্যন্ত চেষ্টা করেও তারা ট্রেনের টিকিট পাননি।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে তিন দিন ধরে ট্রেনের টিকিট যেন সোনার হরিণ। এক সপ্তাহ আগেই ট্রেনের টিকিট কাউন্টারের সামনে সাদা কাগজে লিখে রাখা হয়েছে- 'আগামী ২৬ ও ২৭ তারিখের কোনো ট্রেনের সিট খালি নাই।'

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ অক্টোবর অনার্সের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবারে দুটি ইউনিটের এক হাজার ৬০৩টি আসনের বিপরীতে ৭০ হাজার ৫৪৯ পরীক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এদের সঙ্গে নূ্যনতম একজন করে অভিভাবক ধরলে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে অন্তত দেড় লাখ মানুষ সিলেটে আসবেন এবং যাবেন। এ কারণে পরীক্ষা শেষে ফেরার জন্য ট্রেনের সঙ্গে বাসের টিকিট নিয়েও হাহাকার শুরু হয়েছে।

এদিকে আগামী ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ফলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে অনেকে সরাসরি চট্টগ্রামে রওনা হবেন। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার পাশাপাশি সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনের টিকিটও মিলছে না। অবশ্য কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও দ্বিগুণ-তিন গুণ দামে ঢাকাগামী ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে কালোবাজারে।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ট্রেনের টিকিটের চাহিদা ঈদের সময়কার পরিস্থিতির চেয়েও বেশি বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. আফসার উদ্দিন। রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন কিছু মানুষ সিন্ডিকেট করে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে নেয় বলে স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি বলেন, কাউন্টার খোলার পর আশপাশের মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট নিয়ে নেয়।

এদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলে দাবি করে স্টেশন ম্যানেজার বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ২৬ ও ২৭ অক্টোবর ট্রেনে অতিরিক্ত বগি দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানতে পারেননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতিরিক্ত বগি দিলে নির্ধারিত দিন সকালে টিকিট বিক্রি করা হবে। তিনি জানান, ঢাকাগামী চারটি ও চট্টগ্রামগামী দুটি আন্তঃনগরের প্রতিটিতে ৬০০ করে আসন থাকে।

এদিকে, এই ট্রেনগুলোর প্রতিটির ৫০ শতাংশ টিকিট নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে বিক্রি করা হয়। নির্ধারিত দিনের ১০ দিন আগে ভোর ৬টা থেকে রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে ও অনলাইনে বিক্রি শুরু হয়। অনলাইনে মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে টিকিট কাটার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও অসাধু সিন্ডিকেট চক্র বিভিন্ন নম্বর দিয়ে টিকিট কিনে রাখে। এরপর বেশি দামে টিকিটগুলো কালোবাজারে বিক্রি করে। রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে তিনটি দোকানে অনলাইনের টিকিট বিক্রির সত্যতা পাওয়া গেছে।

গতকাল সরেজমিনে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে নির্ধারিত কাউন্টারে ২৬ ও ২৭ অক্টোবরের ঢাকা ও চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনের কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি। এমনকি ২৮ অক্টোবর সকালের টিকিটও নেই কাউন্টারগুলোতে। তবে পরিচয় গোপন রেখে এই প্রতিবেদক রেলওয়ে স্টেশনে কবিরের দোকান ও স্টেশনের উল্টো দিকের যমুনা সুপারমার্কেটে নিচতলার ডান পাশের একটি দোকানে ২৭ অক্টোবর সকালের টিকিট পেয়েছেন।

দোকানের কর্মচারী ২৭ অক্টোবর সকালে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের তিনটি টিকিট বিক্রি করতে রাজি হন। এই টিকিটগুলোর মূল্য ৪২৫ টাকা হলেও দোকান কর্মচারী ৮০০ টাকা দাবি করেন। একইভাবে সাধারণ যাত্রী হিসেবে টিকিট খুঁজতে গেলে রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থিত কবিরের দোকানে টিকিট পাওয়া যাবে বলে জানান ট্রেনের একজন কর্মকর্তা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে ট্রেনের পাশাপাশি আন্তঃজেলা বাসের টিকিটের দামেও আগুন লেগেছে। গ্রিনলাইন, লন্ডন এক্সপ্রেস, এনা, ইউনিট, হানিফ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে ২৬ অক্টোবর রাত থেকে ২৭ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত কোনো টিকিট পাওয়া যায়নি। ঢাকাগামী এনা পরিবহনের এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ১২শ' টাকা এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৪৭০ টাকা। অন্যদিকে চট্টগ্রামের ভাড়া ৭০০ টাকা।

একইভাবে অন্যান্য বাসের ভাড়া কমবেশি প্রায় হলেও কাউন্টারে গিয়ে নির্ধারিত দু'দিনের টিকিট মিলছে না। তবে বাসের কাউন্টারের আশপাশের টং দোকান বা পরিবহন শ্রমিক নেতাদের কাছে দ্বিগুণ দামে টিকিট মিলছে। শফিকুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী জানান, এনা পরিবহনে ২৬ অক্টোবর রাতের দুটি টিকিট তিনি কিনেছেন আড়াই হাজার টাকায়। সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, বেশি টাকা দিলে যে কোনো দিনের টিকিট পাওয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এম এমদাদুল ইসলাম জানান, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবেন।

আরও পড়ুন

×