ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

এক পুকুরেই মাছ ও বিদ্যুৎ

এক পুকুরেই মাছ ও বিদ্যুৎ

এ কে এস রোকন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ | ০৪:৩৩

পাশাপাশি দুটি পুকুরের ওপর সারি সারি সাজানো প্রায় ১৫০০ সোলার প্যানেল। পুকুরের পানি থেকে একটু ওপরে বাতাস ও ঢেউ সামলাতে সক্ষম কাঠামোয় ভাসছে প্যানেলগুলো। এভাবে একইসঙ্গে পুকুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও মাছ চাষ করা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিসিক এলাকায়।

একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালু হয়েছে পুকুরে ভাসমান এ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুকুরের প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে প্যানেলগুলো।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি জুলস পাওয়ার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, সদর উপজেলার আতাহার-বুলনপুরের বিসিক শিল্প এলাকায় নবাব অটো রাইস মিলের আওতায় নবাব মৎস্য খামার প্রকল্পের দুটি পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে এই ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটির চাহিদা পূরণ করে যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে।

তাঁরা জানান, গত সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২.৩ মেগাওয়াট হলেও পিক আওয়ারে (সূর্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকাকালীন ৪ ঘণ্টা) গত তিন দিনে ঘণ্টাপ্রতি সর্বোচ্চ ১.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে এক বছর এই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। মাছচাষের ক্ষতি না হলে এমন প্রকল্প ব্যাপকহারে বাড়ানো হবে। পুকুরের অর্ধেক জায়গায় সোলার প্যানেল থাকায় এবং সোলার প্যানেল সরানোর সুযোগ থাকায় মাছের পরিচর্যায় সমস্যা নেই বলে তাঁরা মনে করছেন।

জুলস পাওয়ার লিমিটেডের হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, প্রকল্পটির জন্য ৬ একর আয়তনের একটি জলাশয়ের অর্ধেক ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের ফ্লোটার ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে মাছের ক্ষতি না হয়। এর লাইফটাইম প্রায় ২৫ বছর। ঝড় কিংবা টর্নেডোর কথা বিবেচনায় অ্যাঙ্করিং সিস্টেমও রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী। প্রকল্পটি কার্যকর হলে ব্যাপকভাবে এর বিস্তার ঘটাতে চান তাঁরা।

নাহিদুজ্জামান বলেন, নবাব অটো রাইস মিলে দৈনিক ২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। দিনের বেলা সোলার বিদ্যুৎ থেকে চাহিদার প্রায় পুরোটাই সরবরাহ দেওয়া যাবে। কারখানায় কোনো কারণে লোড না থাকলে বিদ্যুৎ চলে যাবে জাতীয় গ্রিডে, যা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে।

নবাব গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মমিন জানান, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ১০ পয়সায় কিনতে পারায় মিল মালিকের একদিকে আড়াই টাকা করে সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লোডশেডিং মুক্ত থাকায় তাঁদের উৎপাদন কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে। বিদ্যুৎ খরচ কতটা সাশ্রয়ী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিক আওয়ারে তাঁদের সর্বোচ্চ আড়াই মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কারখানার জন্য মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ প্রয়োজন। প্রকল্প সফল হলে খরচের ৭০ শতাংশ সাশ্রয় হবে বলে আশা করছেন তিনি।

এদিকে এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে বলে গত মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি লিখেছেন, কয়েক মাস জলাশয়টিতে মাছের বৃদ্ধি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরিবেশগত ভারসাম্য অটুট থাকলে দেশের বিভিন্ন জলাধারে আরও বড় পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×