ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

খুলনা সিটি নির্বাচন

কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘিরেই সব উত্তেজনা

কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘিরেই সব উত্তেজনা

খুলনা নগর ভবন। ফাইল ছবি

হাসান হিমালয়, খুলনা

প্রকাশ: ১০ জুন ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩ | ০৯:৪৭

মনোনয়নপত্র জমার পর থেকেই মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন খুলনার ভোটাররা। বিএনপির কেউ অংশ না নেওয়ায় নির্বাচনী মাঠ ফাঁকা হয়ে যায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের। খালেকের সঙ্গে অন্য ৫ প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যবধান অনেক। এসব কারণে শুরু থেকেই ভোটারদের কাছে গুরুত্ব হারায় সিটির ভোট। কিন্তু শেষ দিকে এসে নিরুত্তাপ এই নির্বাচনে উৎসবের পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

নির্বাচনের এক দিন আগে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার ভোট উৎসব এবং উত্তেজনা সবকিছুই আবর্তিত হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘিরে। সাধারণ ৩১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। দল থেকে বহিষ্কার হলেও ৪টি ওয়ার্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন বিএনপির সাবেক নেতারা। ৩টি ওয়ার্ডে জামায়াত নেতাদের কারণে হিমশিম খাচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, অনাগ্রহী ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাঁদের পোস্টার, ফেস্টুন উৎসবের রং ছড়িয়েছে নগরীর অলিগলিতে। কয়েকটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে চাপা উত্তেজনা রয়েছে। উৎসবে অংশ না নিতে বিএনপি নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়েছে দলটি। তবে নেতাদের ‘চোখ রাঙানি’র মধ্যে অনেক ওয়ার্ডে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছে বিএনপি।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আগামীকালের নির্বাচনে কেসিসির সাধারণ ৩১টি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে ১৩৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৮ জন। ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ৭৩২টি বুথে তাঁরা ইভিএমে ভোট দেবেন।

এ বছর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। মেয়র পদে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে প্রার্থী হয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ আবদুল আওয়াল, জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক।

কেসিসির বিগত ৫টি নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মেয়র পদে ভোট। কিন্তু এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ভোট নিয়ে আগ্রহ কম। নির্বাচনে আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জনগণের মুখোমুখি, প্রতিশ্রুতি ও আগামী পরিকল্পনা নিয়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করত নাগরিক সংগঠনগুলো। কিন্তু এবার কিছুই হয়নি।

নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগে কাউন্সিলর পদে প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি নেতারা অংশগ্রহণ না করায় ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যার কারণে নগরীর সাধারণ ৩১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টিতেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। সংরক্ষিত ১০ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন ৯টিতে।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। আশা করছি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে। ভোটাররা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন সেজন্য নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

২৫টি ওয়ার্ডে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রাজ্জাক, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাদাত মিনা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মনিরুজ্জামান খান খোকনের মধ্যে।

২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুলের; ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর আবদুস সালামের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদ হাসান পিকুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলছেন ভোটাররা।

নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রিমুখী লড়াইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও সাবেক বিএনপি নেতা কবির হোসেন কবু মোল্লার সঙ্গে জামায়াত নেতা আশরাফ হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপুর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শেখ মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বিএনপি নেতা সাজ্জাদ আহসান তোতনের; ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স ও থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান তরফদার মিজা; ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও যুবলীগে যোগ দেওয়া সুলতান মাহমুদ পিন্টু এবং থানা আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক শেখ খালিদ হোসেন; ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর ডালিম হাওলাদার ও থানা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান; ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মাহফুজুর রহমান লিটন ও সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া সাবেক কাউন্সিলর কাজী সারোয়ার আলম মানুর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা কাজী তালাত হোসেন কাউট, থানা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাক ডা. এ এস এম সায়েম মিয়া ও খালিশপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শরিফুল ইসলাম প্রিন্সের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে।

১১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মুন্সী আবদুল ওয়াদুদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আরেক আওয়ামী লীগ নেতা নাইমুল ইসলাম খালেদের। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিনের সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াত নেতা মাস্টার শফিকুল আলমের।
নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ১০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জমাদ্দার, শ্রমিক লীগ নেতা নাসির সরদার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলামের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তথ্য মিলেছে।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আনিসুর রহমান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান ইফতেখার চালু এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে হাফিজুর রহমান হাফিজের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ইউসুফ আলীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা রাজুল হাসান রাজুর সঙ্গে জামায়াত নেতা মশিউর রমজান এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমিক লীগ নেতা জাকির হোসেন বিপ্লবের সঙ্গে বিএনপি নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর আশফাকুর রহমান কাকনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে কাউন্সিলর গাউসুল আজম দুই প্রার্থীর তুলনায় এগিয়ে আছেন।

২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ইমরুল হাসান এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ইমাম হোসেন চৌধুরী ময়নার সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল ইসলাম টিটোর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বিকুর সঙ্গে ভোটের লড়াই হবে সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা মাহাবুব কায়সারের মধ্যে। এ ছাড়া ১৫, ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একচেটিয়া অবস্থান রয়েছে।

২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আজমল আহমেদ তপনের সঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য জিয়াউল হাসান টিটো; ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও সদর থানা সাধারণ সম্পাদক ফকির সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যুবলীগ নেতা মুন্সি নাহিদুজ্জামানের; ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফফর রশিদী রেজার সঙ্গে সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেছে।

নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন হেলালের।

আরও পড়ুন

×