ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্যাকেটে বিএসটিআইর ভুয়া সিল

প্যাকেটে বিএসটিআইর ভুয়া সিল

সনি আজাদ, চারঘাট (রাজশাহী)

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ | ০৩:৩৬

রাজশাহীর চারঘাটে বিভিন্ন বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশে খাবার তৈরি করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এগুলো খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বেকারি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সচেতন নাগরিকদের।

 নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকের তথ্য অনুযায়ী, চারঘাট উপজেলার সরদহ এলাকার ইসলামিয়া বেকারি ও সদরের বাঁধন বেকারি নামে মাত্র দুটি কারখানার বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন রয়েছে। অনুমোদনহীন বেকারি কারখানা রয়েছে ১৮টি। গত এক সপ্তাহে উপজেলার নন্দনগাছীর মিলন বেকারি, বালুদিয়াড়ের মামা-ভাগনে বেকারি, কালাবিপাড়ার ইয়াসিন বেকারি, হাবিবপুরের রিফাত বেকারি, শলুয়ার পুষ্টি বেকারি ও সদরের সবুজ বেকারি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, পণ্যের প্যাকেটে বিএসটিআই সিল ও লাইসেন্স নম্বর দেওয়া থাকলেও কোনো বেকারিতেই এগুলোর প্রমাণপত্র নেই। অনুমোদনহীন কারখানাগুলো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সব ধরনের বেকারিপণ্য বাজারজাত করছে। কালাবিপাড়া এলাকার ইয়াসিন বেকারিতে গিয়ে দেখা যায়, কর্মচারীরা হাতে গ্লাভস ছাড়াই ময়দা পিষছেন। কেউ এক হাতে সিগারেট ফুঁকছেন, অন্য হাত দিয়ে কাজ করছেন। খোলা তেলভর্তি ড্রামের ওপর মাছি ভনভন করছে। কারাখানায় ছড়িয়ে আছে ইঁদুর ও তেলাপোকার বিষ্ঠা। নন্দনগাছীর মিলন বেকারিতে দেখা যায় খালি গায়ে আটা-ময়দার স্তূপে দাঁড়িয়ে ময়দা মাখতে। কারও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কেক ফেরত এনে ড্রাই কেক বানানো হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, খোলাবাজারে এসব বেকারিপণ্য অবাধে বিক্রি হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর খাবার সাধারণ মানুষ না জেনেই খাচ্ছে। এতে গ্যাস্ট্রিক-আলসার, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। বিশেষ করে শিশুরা পেটের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

উপজেলা সদর, নন্দনগাছী, ডাকরা, বাঁকরা, হলিদাগাছী ও সরদহ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকান ও ভ্যানে খোলা অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, লাড্ডু, সেমাইসহ নানা বেকারিপণ্য। প্রতিটি দোকানে রয়েছে ক্রেতার ভিড়। কথা হয় কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে। অধিকাংশ ক্রেতাই জানেন না কেমন পরিবেশে তৈরি খাবার কিনছেন।

বিক্রেতারা বলছেন, তাঁরা বেকারি থেকে কিনছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁরাও জানেন না এসব খাবার মানবদেহের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর। মহসিন আলী নামে এক ক্রেতা বলেন, আমরা তো এত কিছু জানি না। সস্তায় খোলাবাজারে বিস্কুট, চানাচুর ও লাড্ডু পাওয়া যায়। তাই কিনি।

মহিদুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, তদারকির অভাবে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে বেকারি। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার যেমন জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, তেমনি সরকারও হারাচ্ছে রাজস্ব। এসব অনিয়ম দেখার কেউ নেই।

আবদুল কুদ্দুস নামে এক বিস্কুট বিক্রেতার ভাষ্য, উপজেলার বিভিন্ন বেকারি থেকে বিস্কুট কিনে বাজার ও গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি। কারখানায় কীভাবে বানায় তা তাঁরা জানেন না। ইয়াসিন বেকারি কারখানার মালিক তুফান আলীর দাবি, শুধু তিনি নন, আশপাশের কোনো কারখানারই বিএসটিআইর অনুমোদন নেই। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বেকারি চালান, কাগজপত্র লাগে না। নিয়ম মেনেই পণ্য তৈরি করেন তিনি।

নন্দনগাছীর মিলন বেকারির মালিক মিলন আলী বলেন, বিএসটিআইর অনুমোদন পাওয়া কঠিন ব্যাপার। আবেদন করেছেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এদিকে অনুমোদনহীন কারখানাগুলোর চাপে বেকারি টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে অনুমোদিত বেকারি দুটি।

এ বিষয়ে চারঘাটের বাঁধন বেকারির মালিক আজিজুর রহমান বলেন, তাঁরা সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে কারখানা চালান। পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে হয়। কিন্তু অনুমোদনহীন কারখানাগুলোর এসব বালাই নেই। তারা যেনতেনভাবে পণ্য তৈরি করে কম দামে বাজারে ছাড়ছে। এতে অনুমোদিত বেকারি দুটি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলা স্যানিটারি পরিদর্শক আফজাল হোসেন জানান, কারখানাগুলো নিয়মিত তদারকি করছেন। যেসব কারখানা নিয়মনীতি মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকারের কাছে জানিয়েছেন।

কিছুদিন আগে চারঘাটের মামা-ভাগনে বেকারি, মিলন বেকারি ও ইসলামী বেকারিতে অভিযান চালিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পণ্যের মেয়াদের তারিখ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুম আলী।

বেকারি কারখানার অনুমোদনের বিষয়ে বিএসটিআইর রাজশাহী জেলার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, সিভিল সার্জন অফিসের সনদ, টিন সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে তবেই তাঁরা কারখানাগুলোর অনুমোদন দেন। অধিকাংশ বেকারি এসব শর্ত পূরণ করতে না পারায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

×