ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন

ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে নির্যাতন

ফাইল ছবি

পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার তিন তরুণকে মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। লিবিয়ায় তাঁদের বন্দি করে রেখে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তাঁদের মারধরের শব্দ, ঘোঙানি ও আর্তচিৎকার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে সেগুলো পাঠানো হচ্ছে দেশে থাকা স্বজনের কাছে। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা এ অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁদের আহাজারির যেন শেষ নেই। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দালালচক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

দোয়ারাবাজারের এই তিন পরিবার জানায়, তাঁদের কাছে মুক্তিপণের ৫১ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। তাঁরা অসহায়। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। পরিবারগুলোর দাবি, তাদের সন্তানদের বিদেশে মাফিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার পেছনে দোয়ারাবাজারের বড়খাল গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল বারেক, তাঁর স্ত্রী রাজিয়া খাতুন, ছেলে রেজাউল করিম ও শ্যালক আব্দুল হামিদ দায়ী।

লিবিয়ায় আটকে পড়া তিন তরুণ হলেন– উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের ভিখারগাঁও গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে সুমন মিয়া, কুশিউড়া গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে নোমান মিয়া, চনোগাঁও গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে সৌরভ আহমেদ। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছরের অক্টোবরে লিবিয়ায় যান সুমন, নোমান ও সৌরভ। তাঁদের লিবিয়ায় পৌঁছার খবর জানতে পারেন বারেক। তিনি লিবিয়াতেই থাকেন। তিনি তিন তরুণকে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা করে দেওয়ার চুক্তি করেন। চুক্তিটি ওই তিন যুবকের পরিবারের সঙ্গে করেন দেশে থাকা বারেকের স্ত্রী রাজিয়া, ছেলে রেজাউল ও শ্যালক হামিদ। চুক্তি অনুযায়ী আর্থিক লেনদেন হয়।

লেনদেনের কিছুদিন পর বারেকের পরিবারের লোকজন জানায়, সুমন, নোমান ও সৌরভ লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটকা পড়েছেন। সাড়ে ৭ লাখ টাকায় তাদের ইতালি পাঠানো সম্ভব হবে না। মাফিয়ার হাত থেকে ছাড়ানোসহ আরও ৩ লাখ টাকা করে প্রত্যেককে দিতে হবে। গত ৩ এপ্রিল বারেকের স্ত্রী রাজিয়ার সঙ্গে কথা বলেন তিন তরুণের স্বজনরা। ৩ লাখ টাকা করে জমা দেন বারেকের স্ত্রীর কাছে। ৩০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র হয়। এর পর দুই মাস গেছে। এখনও মারধর করে বাড়িতে ফোন দিয়ে আর্তচিৎকার শোনাচ্ছে মাফিয়ারা।

উপজেলার ভিখারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সুমনের ভাই সেলিম আহমদ জানান, তাঁর ভাই ফোনে বাবাকে বলেছে, ‘আমাকে মারধর করছে, আমি আর বাঁচব না। তাড়াতাড়ি ১৭ লাখ টাকা পাঠাও। আমাকে বাঁচাও বাবা।’

একই কথা জানান নোমান ও সৌরভের পরিবারের সদস্যরাও। মারধরের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিন তরুণের পরিবারের সদস্যরা জানান, এখন বারেকের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাঁর স্ত্রী রাজিয়া এবং ছেলে রেজাউলও গ্রামে নেই।

গত বুধবার স্থানীয় সাংবাদিকরা বড়খাল গ্রামে গিয়ে বারেকের বসতঘর তালাবদ্ধ দেখতে পান। সারাদিন চেষ্টা করেও রাজিয়ার ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। সন্ধ্যায় তিনি ফোন রিসিভ করে জানান, তিনি তিন তরুণের পরিবারের কাছ থেকে ২৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছেন। আরও ১৬ লাখ টাকা পাঁচ দিনের মধ্যে দিলে তাঁদের ইতালি পাঠানো হবে বা তাঁরা ইচ্ছে করলে দেশে আসতে পারবেন। স্বামী বারেকের সঙ্গে ‘পাঁচ দিন যোগাযোগ না হওয়ায়’ এর বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলে ফোন কেটে দেন।

আরও পড়ুন

×