হালদায় প্রায় ১৭ হাজার কেজি মাছের ডিম সংগ্রহ

হালদা নদীতে মা মাছের ছাড়া নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করেন মৎস্যজীবীরা/ ছবি- সারোয়ার সুমন
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৩ | ১৬:১০ | আপডেট: ১৯ জুন ২০২৩ | ১৬:১০
দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে রোববার মধ্যরাতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। এর পরপরই তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে সাড়ে সাতশ মৎস্যজীবী উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন। পাহাড়ি ঢল ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় এবার রেকর্ডসংখ্যক ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা গবেষকরা।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষিত হালদা নদী। বছরের এই সময়ে (এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত) বজ্রসহ বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল নামলে অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে জোয়ার ও ভাটার সময় নিষিক্ত ডিম ছাড়ে কার্প জাতীয় মাছ। নদীতে মা মাছের ছাড়া সেই নিষিক্ত ডিম বিশেষ ধরনের জাল দিয়ে সংগ্রহ করেন মৎস্যজীবীরা। পরে হ্যাচারিতে রেণু ফোটানো হয়।
এবার রোববার রাতে নয়াহাট বাজার, আজিমের ঘাটা, পুরালিয়া স্লুইসগেট, মাছুয়া ঘোনাসহ হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়ে। ডিম পাওয়া গেছে প্রায় ১৭ হাজার কেজি। প্রতি ৬০ কেজি ডিম থেকে ৪ দিন বয়সী ১ কেজি রেণু ফোটানো সম্ভব হয়।
ডিম আহরণকারী জেবল হোসেন বলেন, রোববার সকাল থেকে নদীতে জাল পেতে পুরোদমে ডিম ছাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন মৎস্যজীবীরা। সারা দিন নদীতে অবস্থান নিয়ে ডিম না ছাড়ায় অনেকেই হতাশ হয়েছেন। পরে মধ্যরাতে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এরপর তিন শতাধিক নৌকা হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে ডিম সংগ্রহ শুরু করে। ভোর পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে চলে ডিম সংগ্রহ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, অনেক অপেক্ষার পর রোববার রাতে নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। সাধারণত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে জুন পর্যন্ত উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রবল স্রোত তৈরি হলে, দলে দলে ডিম ছাড়তে আসে মাছ। নদীর সত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত এসব এলাকায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। এবার যে পরিমাণ নমুনা ডিম সংগ্রহ হয়েছে, তা রেণু ফোটানোর জন্য যথেষ্ট।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলি জানান, ডিম আহরণ করে নিরাপদে রেণু ফোটানোর জন্য ১৭৫টি কুয়ায় রাখা হয়েছে। এখানে রেণু ফোটার পর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল আলম জানান, ডিম ছাড়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হালদা নদীতে যাতে কেউ মাছ চুরি করতে না পারে, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন নজরদারি বাড়িয়েছে। এ ছাড়া বাইরের বিভিন্ন হ্যাচারি ও খামার থেকে ভেজাল পোনা ও রেণু যাতে হালদা তীরবর্তী এলাকায় ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
- বিষয় :
- হালদা
- ডিম সংগ্রহ