ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

টোকা দিলেই খসে পড়ে ভবনের নির্মাণসামগ্রী

টোকা দিলেই খসে পড়ে ভবনের নির্মাণসামগ্রী

মঙ্গলবার ফুলবাড়িয়ায় বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে উপজেলা প্রশাসন সমকাল

ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের বালু, সিমেন্ট, পাথর ব্যবহারের খবর পেয়ে গতকাল মঙ্গলবার ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণকাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আবু শাহরিয়ার, কার্যসহকারী প্রণব কুমার সরকার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এই নোটিশ দেন উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মুর্শেদ।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন নির্মাণে ৯৯ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে। কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হৃদয় এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি অনুয়ায়ী নির্মাণকাজ শুরু হয় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি, যা চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়। ছাদ ঢালাইসহ অর্ধেকের বেশি কাজ শেষ পর্যায়ে। গত সোমবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন বিদ্যালয় ভবনের নিচতলায় পিলারগুলোতে ফাটল দেখতে পায়। এ সময় পিলারে হাত দিয়ে আঁচড় দিলে বালু, সিমেন্ট ও পাথর উঠে রড বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক তদন্তে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. নাহিদুল করিম ও উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মোর্শেদ। তাঁরা দেখতে পান ভবনের বারান্দার দুটি পিলার ও ভেতরের একটি পিলারে হাতুড়ি দিয়ে টোকা দিলে বালু, সিমেন্ট ও পাথর খসে রড বেরিয়ে আসে। পিলারটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একই রকম তিনটি পিলারের চারদিকে বাঁশ দিয়ে ছাদের সঙ্গে ঠিকা দেওয়া হয়। ছাদের অবস্থা অনেকটা একই রকম মনে করছেন কর্মকর্তারা। এমন পরিস্থিতিতে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী।

স্থানীয় সরকার বিভাগের কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল এসে বিদ্যালয় ভবন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুনরায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান উপজেলা প্রকৌশলী।

ইউএনও জানান, কাজের শুরুতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৫ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। আরও ৩০ লাখ টাকার বিল উত্তোলনের চেষ্টা করছিল, এমন খবর তাঁর কাছে এসেছে।

বিদ্যানন্দ গ্রামের রাসেল মিয়া বলেন, স্কুলের ভবন নির্মাণকাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। ভবনের পিলারে হাত দিয়ে আঁচড় দিলে বালু, সিমেন্ট ও পাথর খসে পড়ে। একেবারেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হৃদয় এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদিন বাদল পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে তাঁর প্রতিনিধি আহসান হাবিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি কাজটি কিনে নিয়েছি। তবে এটি একটি চক্রান্ত।’

উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব মোর্শেদের ভাষ্য, প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। কাজের তদারকিতে গাফিলতির দায়ে উপসহকারী প্রকৌশলী, কার্যসহকারী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। ভবনের কাজ পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে বিশেষজ্ঞ দল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. নাহিদুল করিম বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

×