ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

দিনমজুর রথীন্দ্র দাসের কেউ রইল না

দিনমজুর রথীন্দ্র দাসের কেউ রইল না

রথীন্দ্র দাসের নিখোঁজ দুই মেয়েকে উদ্ধারে অভিযান চলছে। ছবি- সমকাল

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৩ | ১৮:০০

‘গেল বৈশাখ মাসে ছোট ছেলে অজয়ের (আড়াই বছর) জন্ডিস অইছিল। না বুইজ্জা জ্বরের ওষুধ খাওয়াইছি। পরে ছেলেটা মারা গেছে। মেঘ-বৃষ্টির মধ্যে ছেলেমেয়েরে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও লইয়া যাচ্ছিল বউটা। যাওয়ার পথে নিজেও মরছে, বাইচ্ছাইনরেও (সন্তানদের) মারছে। আমি অখন একলা, আমার আর কেউ নাই।’

কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বিলপুর গ্রামের দিনমজুর রথীন্দ্র দাস। গত সোমবার সন্ধ্যার পর ডুবন্ত সড়ক পার হওয়ার সময় দারাইন নদীর স্রোতে দুই সন্তানসহ ভেসে যান তাঁর স্ত্রী দুর্লভ রানী দাস (৩০)।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে মাউতির বাঁধের পাশ থেকে দুর্লভ রানীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এখনও নিখোঁজ দুই সন্তান জবা রানী দাস (৭) ও বিজয় দাস (৪)।

রথীন্দ্র দাস জানান, ঘটনার দিন বিকেলে তিনি বাড়ি ছিলেন না। কাজ থেকে ফিরে শোনেন, তাঁর স্ত্রী দুই সন্তানসহ এলাকার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে গেছেন। তাঁদের আসতে দেরি হওয়ায় পরে তিনিও বাজারে যান। সেখান পৌঁছানোর পর শোনেন, দুই সন্তানসহ এক নারী স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছেন। রথীন্দ্র দাস তখনই বুঝতে পারেন, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরাই ভেসে গেছেন। এরপর তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সারারাত সেখানেই ছিলেন। সকালে দুর্লভ রানীর লাশ ভেসে ওঠে ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে ভাটির মাউতির বাঁধের পাশে।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তালেব জানান, এ দিন সন্ধ্যার দিকে দুই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন দুর্লভ রানী। পথে শাল্লা সরকারি কলেজসংলগ্ন সেতুর পাশের ডুবন্ত সড়ক পার হতে গিয়ে সন্তানদের সঙ্গে তিনিও স্রোতের তোড়ে ভেসে যান। গতকাল সকালে ওই নারীর লাশ পাওয়া গেছে। তবে ডুবুরিরা দুই শিশুকে না পেয়ে অভিযান শেষ করে বিকেলে চলে গেছেন। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের আশপাশের হাওরে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।

ইউএনও আরও জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রথীন্দ্র দাসকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও তাঁকে সহায়তার চিন্তাভাবনা চলছে।

আরও পড়ুন

×