সুপেয় পানির পুকুর পাড়ে মার্কেট নির্মাণে ইজারা

ছবি: সমকাল
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ | ০১:১০
বাগেরহাটের উপকূলীয় উপজেলা শরণখোলায় বছরের অন্তত চার থেকে পাঁচ মাস সুপেয় পানির তীব্র সংকট থাকে। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়েও পানি সংগ্রহ করতে হয় বাসিন্দাদের। ওই সময় উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অল্প কিছু পুকুর মানুষের পানির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উপজেলার রায়েন্দা বাজারে জেলা পরিষদের পুকুরটি এর মধ্যে অন্যতম। পুকুরের পানি ব্যবহারযোগ্য করতে এখানে ৭ লাখ টাকায় একটি প্রেশার স্যান্ড ফিল্টারও (পিএসএফ) স্থাপন করা হয়েছে। সম্প্রতি পুকুরের একপাশ মার্কেট নির্মাণে ইজারা দিয়েছে জেলা পরিষদ। এতে জনমনে ক্ষোভের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পানির কষ্ট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
স্থানীয়রা জানান, শতবর্ষী পুকুরটির পূর্ব পাশে মার্কেট নির্মাণ করে এরইমধ্যে সংকুচিত করে ফেলেছে জেলা পরিষদ। এখন দক্ষিণ পাশে আরেকটি মার্কেট নির্মাণ করা হলে পুকুর অস্তিত্ব হারাবে। পুকুর রক্ষায় মানববন্ধনও করেছেন তাঁরা।
শরণখোলায় পানি সংকট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন রাসেল আহমেদ। তিনি বলেন, রায়েন্দা বাজারসংলগ্ন এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ পুকুরটির ওপর নির্ভরশীল। জরুরি ভিত্তিতে পুকুরটি এখন খনন করা প্রয়োজন, অথচ সেখানে মার্কেট নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে পানির কষ্ট কতটা তীব্র, কর্তৃপক্ষ যদি তা বুঝত।
রায়েন্দা সরকারি পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু হালদার বলেন, স্থানীয় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী এই পুকুরের পানি ব্যবহার করে। পুকুরের ওপর মার্কেট বা ঘর নির্মাণ হলে এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। একই কথা জানান রায়েন্দা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান এবং শরণখোলা আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ উসমান গনিসহ সাধারণ শিক্ষকরা।
রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন মুক্তা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুকুরটি সাধারণ মানুষের জন্য সংস্কার করা প্রয়োজন। অথচ সংস্কার না করে জেলা পরিষদ ঘর নির্মাণের ইজারা দিয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম মেহেদী হাসান বলেন, স্থানীয়দের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় পুকুরের উত্তর পাশে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে গত অর্থবছরে একটি পিএসএফ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাদের দপ্তর থেকে পুকুরটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও পূর্ব পাশে জেলা পরিষদের মার্কেট থাকায় তা সম্ভব হয়নি। যদি আরও একটি মার্কেট নির্মাণ হয় তাহলে পুকুরে পানিও থাকবে না, পিএসএফও বন্ধ হয়ে যাবে।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, পুকুরের দক্ষিণ পাশে আধাপাকা ঘর নির্মাণের জন্য সাতজনের নামে ২০২২ সালের ১৭ জুলাই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ইজারা বন্দোবস্তের একটি অনুলিপি ইউএনওর কাছে এসেছে। চিঠি অনুযায়ী ইজারা পাওয়া সাতজন হলেন– অম্বরিশ রায়, শিরিন সুলতানা রুমি, আসাদুজ্জামান খান, উজ্জ্বল সাহা, মৌসুফা নুর মুমু, ইমরান উদ্দিন শুভ ও শিশির কুমার সাহা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বরাদ্দ পাওয়াদের কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে যুক্ত এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন। তাদের মধ্যে অম্বরিশ রায় চেয়ারম্যানের পিএ হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। তিনি কৌশলে চেয়ারম্যানের সই নিয়ে বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করতে পারেন।
বাগেরহাট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঝুমুর বালা বলেন, ‘বিষয়টি গতকাল জেনেছি। যেহেতু পানির সঙ্গে বৃহত্তর জনস্বার্থ জড়িত আমি শিগগির পুকুরটি পরিদর্শনে যাব এবং জনস্বার্থে ইজারা বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
- বিষয় :
- পুকুর
- সুপেয় পানি
- বাগেরহাট
- শরণখোলা