ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা

কক্সবাজারে ঈদের ছুটিতে অবাধে চলছে পাহাড় কাটা

ছবি: সমকাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩ | ১৬:৪২ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ | ১৬:৪২

ঈদুল আজহার ছুটিতে সরকারি অফিস বন্ধ থাকার সুযোগে কক্সবাজার শহরে বেপরোয়াভাবে চলছে পাহাড় কাটা। গত পাঁচ দিনে অন্তত ২০ একর জমির পাহাড় কাটা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। শহরের কলাতলী পুলিশ লাইনের পাশে বাদশাঘোনা এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী দল সরকারি পাহাড় কাটছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঈদের সময় পাহাড় কাটার তথ্য পেয়ে কয়েকজন কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়ায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। 

সোমবার কলাতলীতে পুলিশ লাইনের দক্ষিণ পাশে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ লাইনের সীমানাপ্রাচীর লাগোয়া বিশাল পাহাড় দখল করে চারতলা ভবন নির্মাণ করছেন খাইরুল আমিন নামের এক প্রভাবশালী। এর পূর্ব পাশেই পাহাড় কেটে ইট ও টিনশেডের একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করছে রফিকুল ইসলাম নামের আরেক প্রভাবশালী। এ ছাড়া সাংবাদিক হাউজিং সমবায় সমিতির নামে প্রস্তাবিত জমিতে পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এর দক্ষিণ পাশে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি পানের বরজ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইফতেখার নামের এক প্রভাবশালী পাহাড় কেটে পানের বরজের জন্য সরকারি জমি ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া বাদশাঘোনা এলাকার পয়োনিষ্কাশনের একমাত্র নালা দখল করে অন্তত ১০টি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন রফিক নামের আরেকজন।

সাংবাদিক হাউজিং সমবায় সমিতির সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী বলেন, ‘জমিটি সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকার এখনও হস্তান্তর করেনি। তবে শোনা যাচ্ছে, ওই জমিতে বিভিন্ন ভূমিদস্যু পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ করছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

স্থানীয়রা জানান, গত এক যুগ ধরে ওই এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ দল নিজস্ব বাহিনী তৈরি করে সরকারি পাহাড় দখল করে কেটে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি করে আসছে। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান এবং মামলা করলেও পরিস্থিতি বদলায়নি। অবৈধ স্থাপনার কারণে খোদ পুলিশ লাইনের নিরাপত্তাও হুমকিতে রয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক ফাইজুল কবির জানান, অভিযানে গিয়ে পাহাড় কাটার প্রমাণ পেলেও জড়িতদের চিহ্নিত করতে পারেননি। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তিনি মামলা করেছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান বলেন, কলাতলী পুলিশ লাইনের পাশে পাহাড় কেটে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনটি এক সপ্তাহের মধ্যে নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে ভবনটির নির্মাণ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আশপাশে নতুন করে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের তথ্য পেয়েছেন।

বেলার আইনি নোটিশ

এদিকে কক্সবাজারের জিলনজা মৌজার ৫ একর পাহাড় শ্রেণির ভূমি সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য বরাদ্দ না দিয়ে বিকল্প স্থানে বরাদ্দ দিতে সরকারের আটটি সংস্থায় আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। পরিবেশ সচিব, ভূমি সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কক্সবাজার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক বরাবরে গত ২৭ জুন ওই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেলার আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।

এ বিষয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, সাংবাদিকদের আবাসনের দাবি সর্বাবস্থায় যৌক্তিক। তবে তা পাহাড় কেটে নয়। বিকল্প কোনো অকৃষি খাসজমিতে আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, প্রচলিত আইন অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ও পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়া পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন

×