নির্বাচন ঘিরে সরগরম স্বরূপকাঠি

স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্বরূপকাঠি বেশ সরগরম। সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো, প্রয়াত নেতৃবৃন্দের কবর জিয়ারতসহ এলাকায় সফর করে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়া শুরু হয়েছে। কদর বাড়ছে অবহেলিত ও বঞ্চিত কর্মীদের।
বিশেষ করে পিরোজপুর জেলার নতুন আসনবিন্যাসের পর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। নিজস্ব বলয় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। কোনো কোনো নেতা এরই মধ্যে স্বরূপকাঠিতে বাড়ি করার জন্য জমিও কিনেছেন। কেউবা পাঁচ বছরের জন্য বাড়ি ভাড়া করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন।অন্যদিকে এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নামে গত সাড়ে চার বছর এ অঞ্চল যে ব্যানার-ফেস্টুনে ভরে থাকত, এবার তাঁর নামে একটি ব্যানারও চোখে পড়েনি।
উপজেলার বিএনপি নেতারাও কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াও এলাকায় সফর বাড়িয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা। অপরদিকে ‘স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা’ জামায়াতে ইসলামীও তাদের কর্মব্যস্ততা বাড়িয়েছে।
এ উপজেলা এক সময় ছিল বরিশালের সঙ্গে পিরোজপুর যুক্ত হয়ে স্বরূপকাঠি ও বানারীপাড়া আসন হিসেবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই জেলার মিশ্রণ থেকে মুক্ত করে স্বরূপকাঠিকে পিরোজপুরের দুই নম্বর আসনের সঙ্গে যুক্ত করে নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তা আবার পরিবর্তন হয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে সময় প্রচুর আপত্তির পরও জেলার অর্ধেক ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন গঠন করা হয়। বাকি অর্ধেক ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-২ ও পিরোজপুর-৩ আসন গঠিত হয়। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই আসন পুনর্বিন্যাস করে চলতি ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছে। এ আসনবিন্যাসে ভোটার সংখ্যার বৈষম্য কিছুটা কমেছে। এবার স্বরূপকাঠি পিরোজপুর-২ আসনে। ওই আসনে স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ), কাউখালী ও ভাণ্ডারিয়ায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ জন। এ বিন্যাসে সন্তুষ্ট হতে না পেরে পিরোজপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করা হয়েছে, যার শুনানি চলমান।
ঈদ-পরবর্তী পিরোজপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জেপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভাণ্ডারিয়া ও কাউখালীতে তাঁর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পক্ষে স্বরূপকাঠিতে বাসা ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। ওই আসনে নবম সংসদের সদস্য আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ শাহ আলম। ঈদের শুভেচ্ছা দিয়ে তাঁর পক্ষে ব্যানার দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে তাঁর পক্ষে বিগত দিনেও কাজ করেছেন, ভবিষ্যতেও করবেন।
পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ গণসংযোগ করছেন। তিনি বলেন, দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন। না পেলে দলের যিনি নৌকা নিয়ে আসবেন, তাঁর পক্ষেই কাজ করবেন। স্বরূপকাঠিতে তাঁর বাড়ি করার জন্য প্রায় কোটি টাকা দামের জমি কেনার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্নার ভাষ্য, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। দলের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেই পথ চলেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা ঈদের আগে থেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। প্রতিদিনই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ করছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সহিদুল আহসান ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার টাঙিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা আজম খান শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার দিয়েছেন।
এ ছাড়া স্বরূপকাঠি-বানারীপাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি স্বরূপকাঠির বিভিন্ন এলাকা সফর করে নেতাকর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
অপরদিকে বিএনপির স্বরূপকাঠি উপজেলার আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহম্মদ সোহেল মঞ্জুরের নাম আলোচনায় এসেছে।
জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নিজেকে জানান দিয়ে ব্যানার দিয়েছেন জাফর ইকবাল নিরব।
জামায়াতের কোনো প্রার্থীর নাম পাওয়া যায়নি। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর কোনো সন্তান প্রার্থী হতে পারেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জামায়াত নেতা জানিয়েছেন।