ব্রহ্মপুত্রের তীব্র ভাঙনে বিলীন ৭০ বসতভিটা

ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুরে। মঙ্গলবার তোলা - সমকাল
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়তে থাকায় চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক মাসে ৩৫টি বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে চর খেদাইমারী, চর ইটালুকান্দা, চর গেন্দার আলগা, ফলুয়ার চর, পালেরচর, কান্দাপাড়া, দিঘলাপাড়া ও ধনারচর পশ্চিমপাড়া এলাকা। এ ছাড়া রাজীবপুর ইউনিয়নের কোদালকাটি ইউনিয়নের সাজাই বাজারপাড়ায় ২০টি বসতভিটা ও পাইকান্টারী এলাকায় ১৫ বসতভিটা, ফসলি জমি, বিভিন্ন স্থাপনা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব এলাকায় নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারে কর্তৃপক্ষ।
কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁর বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়ে গেছে। যেটুকু আবাদি জমি ছিল, নদে চলে গেছে চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী এলাকার জাবেদ আলীর। তাঁর দাবি, এর আগেও তিনবার বসতবাড়ি ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।
চরশৌলমারী ইউনিয়নের চর গেন্দার আলগা গ্রামের ছকিনা খাতুন বলেন, তাঁর বসতবাড়ি ও গাছপালা সবই ব্রহ্মপুত্রে চলে গেছে। তাঁর নিজের কোনো জমি না থাকায় পাশেই অন্যের জমিতে ঠাঁই নিয়েছেন এবং সেখানে ছাপড়া ঘর তৈরি করে বাস করছেন।
ভাঙনের শিকার রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নের সাজাই বাজারপাড়া এলাকার ওহাব আলী, আমজাদ হোসেন, আবু সাইদ, মানিক মিয়া, আব্দুল ছালাম, সাহেদ আলী ও পাইকান্টারী এলাকার নজর ভানু, জাহানারা বেগম, আব্দুল লতিফ, রফিকুল ইসলাম, গোলাপ উদ্দীন, মাইদুল ইসলাম, ছাবিয়া খাতুন, রফিকুল ইসলাম, সাইরুদ্দী। তাঁদের ভাষ্য, প্রতি বছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হন অনেকে। গত এক মাসে তাদের ৩৫টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে চলে গেছে। তাদের চোখের সামনেই এসব হয়েছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না তাদের। বসতভিটা হারিয়ে এখন নিঃস্ব তারা।
রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য নূরুল আমিন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার কারণে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রংপুর বিভাগীয় প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
কথা হয় চরশৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জানান, দুই মাস আগে পানিসম্পদমন্ত্রী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নদীভাঙন এলাকা দেখে গেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে অনেক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে পথে বসেছে। ভাঙনের শিকার মানুষদের পুনর্বাসনের দাবি তাঁর।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএইচএম সাইদুর রহমান দুলালের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘুঘুমারী গ্রামটি বিলীনের পথে। গত এক মাসে ৩৫টি বসতবাড়ি নদে চলে গেছে। তিনি জানান, এখনও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তাঁর দাবি, গত তিন বছরে ঘুঘুমারী এলাকার ৩০০ বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে চলে গেছে।
ভাঙনকবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা আছে। ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে লোক পাঠানো হবে।
তিনি জানান, কীভাবে ভাঙন রোধ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নে তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ চলমান।
- বিষয় :
- ব্রহ্মপুত্র
- নদী ভাঙন