শিল্পবর্জ্যে ফসলি জমির সর্বনাশ

উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত উন্নয়নমূলক সভায় আমন্ত্রিতরা। ছবি-সমকাল
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৩ | ১৬:২৬ | আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৩ | ১৬:২৬
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে স্থাপিত শিল্পকারখানার বর্জ্য সরাসরি ফসলি জমিতে পড়ছে। ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান মালিক বর্জ্য পরিশোধনে ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) স্থাপন করেছেন। কিন্তু তা বন্ধ রেখে অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলছেন। এমন মন্তব্য করে জমির সব মালিককে নিয়ে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন সিকদার।
বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ হলরুমে আয়োজিত এক সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় স্থানীয় সচেতন নাগরিকরাও বিষয়টিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গত অর্থবছরে উপজেলায় হওয়া উন্নয়নমূলক কাজ বিষয়ে এ অবহিতকরণ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ।
উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল সিকদার সভায় আরও বলেন, জমির উর্বরতা নষ্টের বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। শিল্পমালিকদের টাকায় সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় ইটিপি প্ল্যান্ট স্থাপনের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ডা. শাহাবুদ্দিন আহসান বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা শিল্পকারখানার বর্জ্য খাল-বিলে পড়ছে। ফলে ফসলের মাঠ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষকদের একজোট হয়ে সরকারের কাছে দাবি জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
কয়েকটি এলাকায় দূষণের বর্ণনা উঠে আসে কালিয়াকৈর প্রেস ক্লাবেব নির্বাহী সভাপতি সরকার আব্দুল আলীমের বক্তৃতায়। তিনি বলেন, মৌচাক সফিপুর পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বর্জ্য পানি বাধা ছাড়াই উপজেলার মকস বিল, কালিয়াদহ, তুরাগ নদে পড়ছে। শুকনো মৌসুমে এসব বিল থেকে এক সময় হাজার হাজার মণ ধান উৎপাদিত হতো। এখন বিলগুলো ফসলশূন্য। খাল-বিলে বর্জ্য মেশা পানির কারণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে শিল্পকারখানার মালিকদের নিয়ে সভা করে কেন্দ্রীয় ইটিপি স্থাপন করার পরামর্শ দেন। এতে হাজারো কৃষক পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানো যাবে বলে মনে করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএনও তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, গত অর্থবছরে উপজেলায় ৪৫ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে। তবে উপজেলার নিচু এলাকার ফসলি জমি, খাল-বিলে শিল্প মালিকদের ফেলা বর্জ্য মেশানো পানির কারণে জমি নষ্টের অভিযোগ রয়েছে। বিষয়গুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। বর্জ্য মেশা পানি ফসলি জমিতে ফেলা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সভায় জানানো হয়, কালিয়াকৈরে উপজেলা পরিষদের উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দিয়ে চার বছরে ২৮৯টি স্কিমের আওতায় ৭১ কোটি ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সড়ক, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৯৩ টাকা ব্যয় হয়েছে।
এতে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ, সংরক্ষিত (নারী) ভাইস চেয়ারম্যান জায়েদা নাসরিন, বিশিষ্ট সাংবাদিক মুকুল কুমার মৌল্লিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কালিয়াকৈর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আইয়ুব রানা, সহসভাপতি এম তুষারী প্রমুখ।
- বিষয় :
- ফসলি জমি
- শিল্পকারখানার বর্জ্য
- ইটিপি