ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

‘শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু, মরলেও শান্তি পামু’

‘শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু, মরলেও শান্তি পামু’

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩ | ০৪:৫৮

‘জমিদাররা আমার বাপ-দাদারে প্রায় ২০০ বছর আগে ভারতের কোচবিহার থেকে এইখানে নিয়া আসে। তারপরে ব্রিটিশ খেদাইলাম। পাকিস্তান খেদাইলাম। আমার জন্ম ভায়াডাঙ্গা বাজারে। বয়স অহন ৮৫। ছোটবেলা দেখছি বাজারের সব সম্পত্তি জমিদারের। দেখতে দেখতে সব জমি অন্যজনের হয়ে গেল। আমার বাপ-দাদা কইতো– কোনো দিন অন্যের জমি মিথ্যা কাগজ কইরা নিবি না। কিন্তু এলাকার প্রায় সবাই অহন জমির মালিক। বাপ-দাদার ভিটে যে আমাদের না, তা বুঝতে পারি নাই। তাই আমরা আইজ নিজ ভূমিতে পরবাসী। হইয়া গেছি ভূমিহীন।’

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নতুন ঘর পেয়ে নিজের অতীত দুঃখ-বেদনার কথা ব্যক্ত করেন হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্য দুধনাথ রাজভর। এ সম্প্রদায়ের ১১ পরিবার ভায়াডাঙ্গা বাজারের তহশিল অফিসের ভেতরে বংশপরম্পরায় বসবাস করছে।

কথা বলার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দুধনাথ রাজভর। তিনি বলেন, ‘বুঝমান হওয়ার পর ৭০-৭৫ বছর ধইরা অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করছি। অহন প্রধানমন্ত্রী জমিসহ পাকা ঘর দিতাছে। একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারমু। মরলেও শান্তি পামু।’ ওই আশ্রয়ণে দুই শতক জমিসহ একটি পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি নতুন তহশিল অফিস ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হলে তাদের ওই স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। পরে বাজারের প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে টেঙ্গরপাড়া গ্রামে ১১ হরিজন পরিবারের জন্য সরকার ৩০ শতাংশ জমি ক্রয় করে। সেখানে জমিসহ পাকা ঘর তৈরি করে স্থানান্তর করা হচ্ছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। এ ছাড়া একই আশ্রয়ণে চাল-চুলোহীন আরও চারটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার পাচ্ছে জমিসহ পাকা ঘর। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ঘরের চাবি তুলে দেবেন উপকারভোগীদের হাতে।


শনিবার টেঙ্গরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ১৫টি পরিবারের জন্য বসতঘর তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েকটি ঘরে চলছে রঙের কাজ। স্থানীয় সংসদ সদস্য জমিতে মাটি ফেলে চারদিক বাঁধাই করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের কাজ চলমান।


জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার প্রকল্পটি দেখতে আসবেন। তাই সকাল থেকে সেখানে অবস্থান করছেন

উপকারভোগীরা। কথা হয় আশ্রয়ণের বাসিন্দা গৃহবধূ চন্দনার সঙ্গে। তাঁর স্বামী জলধন রাজভর বাজারের কুলি। ঘর পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘৩৪ বছর আগে নতুন বউ হইয়া স্বামীর একটি ছোট্ট ভাঙ্গা ঘরে উঠি। এখনও সেখানেই থাকি।’

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, পাকা সড়কের পাশেই এই আশ্রয়ণ। এখানে থেকে পরিবারগুলো ভায়াডাঙ্গা বাজারে গিয়ে সহজেই কাজকর্ম করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করতে পারবে।

আরও পড়ুন

×