ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছায়া হতে পারেননি ছেলে শান্ত

অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছায়া হতে পারেননি ছেলে শান্ত

মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

 ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রসঙ্গ এলেই সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নাম আসে। দীর্ঘদিন দলের নিয়ন্ত্রণ তাঁর হাতে থাকলেও এখন সে পরিস্থিতি নেই। বার্ধক্যের কারণে তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ছেলে মোহিত উর রহমান শান্ত রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারেননি। দলের নিয়ন্ত্রণ এখন সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবং তাঁর ভাই এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের হাতে।

 মতিউর রহমান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তিন দশকের বেশি সময় তাঁর পরিবারের হাতে ছিল ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণ। অনেকে বলছেন, তিনি ত্যাগী নেতাদের দূরে সরিয়ে ২০০৯ সালের দিকে দলে প্রবেশ করান ইকরামুল হক টিটুকে। নিজের ছেলে শান্ত এবং টিটুকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন তিনি।

তবে দলে অবস্থান জোরালো করার পর টিটু ২০১২ সালের দিকে আলাদা বলয় তৈরি করে কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। নেতাকর্মীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা, দুঃসময়ে আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় তৃণমূলের অনেকে যোগ দেন টিটুর বলয়ে। তিনি ও তাঁর বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের ‘ম্যাজিকে’ দলের পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে। অন্যদিকে তৃণমূল নেতাদের ‘বাতিঘর’ মতিউর রহমান বার্ধক্যের কারণে নেতাকর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। শান্ত তৃণমূলের নেতাদের খোঁজ না রাখায় দিন দিন আধিপত্য কমতে থাকে পরিবারের।

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসন থেকে এমপি হতে বর্তমানে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন আমিনুল হক শামীম। আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর মধ্যে শামীম ও টিটুর পাশে রয়েছে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ, মহানগর ছাত্রলীগ, মেডিকেল কলেজ ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগ, পুরুষ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ছাত্রলীগ, জেলা যুবলীগের একাংশ, মহানগর যুবলীগ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহানগর কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, জেলা যুব মহিলা লীগ, জেলা কৃষক লীগ, জেলা শ্রমিক লীগ ও মহানগর শ্রমিক লীগ।

মতিউর রহমানের স্ত্রী বেগম নুরুন নাহার বর্তমানে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর চাচাতো ভাই আজহারুল ইসলাম জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক। গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্যপদে দাঁড়িয়ে মতিউর রহমানের ভাই মমতাজ উদ্দিন শোচনীয় পরাজিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি প্রবীণ নেতা সাদেক খান মিল্কী টজু বলেন, ‘মতিউর রহমানের মতো মানুষ রাজনীতিতে বিরল। তাঁর ছেলে বাবার ছায়া হতে পারেননি। মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় থাকলে শান্ত তাঁর বাবার মতো জনপ্রিয় হতে পারতেন। এক সময় আমরা টিটুর বিরোধিতা করলেও বর্তমানে তাঁর ধারেকাছে অন্যরা নেই। আমরা হেরে গেছি অর্থের কাছে আর কেউ সুরক্ষাও দেয়নি বলে।’

 সাত মাসেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। জেলা কমিটিতে সভাপতি করা হয় এহতেশামুল আলম এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে। মহানগর শাখায় সভাপতি হন ইকরামুল হক টিটু ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় মোহিত উর রহমান শান্তকে। এখনও দুই ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। নবীন ও প্রবীণদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, ‘মতিউর রহমান স্যার আমাদের নেতা। মাঠ পর্যায়ে ও গ্রামের মানুষের সঙ্গে বন্ধন ছিল তাঁর। শান্ত তাঁর বাবার মতো হতে পারেননি।’ তিনি আরও বলেন, দ্রুত জেলা কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে।

মোহিত উর রহমান শান্ত বলেন, ‘বাবার মতো হওয়া আসলেই সম্ভব নয়। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই এটি সঠিক নয়। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে শুধু বাবার পরিচয়ে দলের নেতা হতে পারতাম না। ব্যবসায়িক কাজে সপ্তাহের কয়েক দিন ঢাকায় থাকতে হয়, বাকি দিনগুলোতে এলাকায় মানুষের সঙ্গেই থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘শুধু উনারা (টিটু-শামীম) নন; আরও কিছু অংশ চেয়েছিল আমাদের অংশটি দুর্বল করে দিতে। আমাদের অংশটা দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়ায় আরেকটা অংশ বঞ্চিত ছিল। সঠিক কাজটা করতে পারি নাই, তাই সংগঠনগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে।’ এ ব্যাপারে ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘আমাদের হাতে রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি এমন নয়। রাজনীতিতে শ্রম ও আত্মত্যাগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শুরু থেকেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত করার চেষ্টা করেছি।’

দল নিয়ে মন্তব্য করতে চান না ত্যাগী নেতা প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। এলাকায় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেখা যায় না তাঁকে। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে– তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেন না। নিভৃত জীবনযাপন করা ত্যাগী নেতা খোকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দলের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি সদর আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

আরও পড়ুন

×