ক্ষমতা হারালেন নিয়োগ বাণিজ্যের হোতারা

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০
২০১৭ সালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী-আরএনবির ১৮৫ জন সিপাহি পদে লোক নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ কারণে আরএনবি পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম, পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. আশাবুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। পরে নিয়োগ বাণিজ্যের ‘হোতা’ এ দু’জনকেই ফের বাহিনীর পৃথক দুটি নিয়োগ কমিটির প্রধান করা হয়। বাহিনীর পূর্বাঞ্চলে ৮০৬ জন সিপাহি নিয়োগে গঠিত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছিল জহিরুলকে। আর পশ্চিমাঞ্চলে চারজন এসআই ও ২০ জন এএসআই নিয়োগ কমিটিতে প্রধান করা হয় আশাবুলকে।
তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপক সমালোচনার মুখে গত ১৭ এপ্রিল বাতিল করা হয়েছে সেই নিয়োগ কমিটি। ফলে নিয়োগ কমিটি থেকে বাদ পড়লেন বহুল সমালোচিত সেই দুই চিফ কমান্ড্যান্ট। এমনকি বাহিনীতে লোকবল নিয়োগের ক্ষমতাও হারালেন তারা। এতদিন ধরে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আগে আরএনবিতে লোক নিয়োগে বাহিনীর প্রধান গঠন করতেন নিয়োগ কমিটি। এখন সেই সুযোগও হারিয়েছেন তারা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেলের অন্যান্য নিয়োগের মতোই আরএনবিতে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে নিয়োগ কমিটি গঠন করতে হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও আরএনবির কমান্ড্যান্ট পর্যায়ের কর্মকর্তার সমন্বয়ে নিয়োগ কার্যক্রম তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
দুদকের মামলায় জহিরুল ও আশাবুল ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আরএনবির সাবেক কমান্ড্যান্ট ফুয়াদ হাসান পরাগ, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক এসপিও মো. সিরাজউল্যাহ এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহমেদকে। অভিযুক্তরা পরস্পরের যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতি করেন বলে দুদকের মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ও। মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে প্রধান করে এই তদন্ত করা হয়। সেই তদন্তেও আরএনবিতে নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তদন্তের সুবিধার্থে সেই তদন্ত প্রতিবেদন দুদকেও পাঠিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৮০৬ জন সিপাহি নিয়োগে গত বছরের ৩০ জুন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রেল মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা সমকালকে বলেন, মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি আরএনবির নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে। এ কারণে আরএনবিতে লোকবল নিয়োগে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তাতে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা থাকায় সেটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আরএনবি চাইলেই কোনো কমিটি করে লোকবল নিয়োগ দিতে পারবে না।
সূত্র জানায়, নিয়োগ আর বদলি বাণিজ্য, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের পদোন্নতি, পছন্দের পাত্রদের গুরুদণ্ডের পরিবর্তে লঘুদণ্ড কিংবা দণ্ড মওকুফ করে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। অভিযোগের কমতি নেই আশাবুলের বিরুদ্ধেও। গত ১০ সেপ্টেম্বর ‘নিয়োগ দুর্নীতির আসামি ৮০৬ নিয়োগ কমিটির দায়িত্বে’ শিরোনামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি আমলে নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ রেলওয়ে। এর ফলে রেলের নিরাপত্তা বাহিনীতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনল রেলপথ মন্ত্রণালয়।