কর্মহীন হয়ে পড়ছেন ডকইয়ার্ড শ্রমিকরা

স্বরূপকাঠিতে হাওলাদার ডকইয়ার্ডে কর্মরত শ্রমিকরা সমকাল
স্বরূপকাঠি (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
‘বাওয়াল বন্ধ হওয়ার পর থেকে ডকে কাজ করি। স্ক্রাবের কাজ করতে পারি। এতে শক্তি লাগে কম; বদলাও কম পাই। শক্ত কাম করতে পারি না, হেইয়ার লইগ্যা কেউ কামে লইতে চায় না। হাটে-বাজারে-গ্রামে ঘুইররা প্লাস্টিকের বোতল টোহাই, হেইয়া বেইচ্চা সংসার চালাই।’ এসব কথা বলেন জগৎপট্টি গ্রামের মসজিদ বাড়ির আশ্বাব আলী (৭৫)।
আশির দশকে স্বরূপকাঠিতে হাওলাদার ডকইয়ার্ড ও পঞ্চবেকিতে জয়নাল মিয়ার ডকইয়ার্ড গড়ে ওঠে। বর্তমানে উপজেলায় ২৯টি ডকইয়ার্ড রয়েছে। ওইসব ডকে কন্ট্রাক্টর, ঝালাই মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, স্ক্রাপ করা শ্রমিক ও সাধারণ শ্রমিক মিলিয়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষ কাজ করতেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় জ্বালানি ও মালপত্রের দাম বাড়ার কারণে ডকইয়ার্ডের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক শ্রমিক রিকশা চালানো, কাঠ কাটা, মাটি কাটাসহ বিভিন্ন কাজ জুটিয়ে নিলেও প্রায় ৩০ শতাংশ এখনও বেকার।
সন্ধ্যা নদীর পূর্ব তীরঘেঁষা স্বরূপকাঠি-ঢাকা সড়কের দু’ধারে ৩০টি হোটেল ও চায়ের দোকান রয়েছে। দোকানিরাও বাকি খাইয়ে অনেক দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চা দোকানি আলম মিয়া, নূরুজ্জামান, সোহাগ ও খাবার দোকানি নিজাম।
ইয়ামিন নামের শ্রমিক ও মুদি দোকানি জামাল হোসেন জানান, ডকের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শত শত শ্রমিক দুরবস্থায় পড়েছেন।
কন্ট্রাক্টর আব্দুর রাজ্জাক, মো. পারভেজ, রং ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, একটি জাহাজ তৈরি বা মেরামতে ৩০-৪০ জন শ্রমিক প্রয়োজন হতো। ১৫-২০টি জাহাজে ৫০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক কাজ করতেন। বর্তমানে ৩-৪টি জাহাজে কাজ করা হয়। এ কারণে শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবি, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নদীপথের চেয়ে সড়কপথের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক মালিক কাজ করছেন না। কেউ কেউ জাহাজ কেটে ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
বানারীপাড়া উপজেলার উদয়কাঠি গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়া জানান, চরে প্রতিদিন ৩০-৪০টি ট্রলারে কাঠ ওঠানামা করত। বর্তমানে ১০টিও থাকে না। যে এলাকায় কাঠ জমা হয়, সেখান থেকে ট্রাকে করে তা চলে যায়।
ছালেহিয়া ডকইয়ার্ডের মালিক আব্দুল গাফ্ফার মৃধা ও হাওলাদার ডকইয়ার্ডের মালিক মোস্তাক হোসেন জানান, ডক সৃষ্টির পর থেকে এমন সংকট কখনও দেখেননি তারা। পদ্মা সেতু চালু ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে জাহাজে মালপত্র বহন করে তেমন লাভ হয় না। জাহাজ তৈরি বা মেরামত কাজের মূল উপাদানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কেউ আর নতুন জাহাজ তৈরি করে না। ফলে বেকার সমস্যা দেখা দিয়েছে।
- বিষয় :
- ডকইয়ার্ড শ্রমিক
- স্বরূপকাঠি
- কর্মহীন