ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল

সভাপতির নিষ্ক্রিয়তায় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটি অকার্যকর

সভাপতির নিষ্ক্রিয়তায় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটি অকার্যকর

সুমন চৌধুরী, বরিশাল

প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে সেবার মানোন্নয়ন তদারকির দায়িত্ব স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির। স্থানীয় এমপি অথবা সিটি মেয়রকে সভাপতি এবং পদাধিকার বলে হাসপাতাল পরিচালককে কমিটির সদস্য সচিব করার বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে বরিশাল-৫ (সদর-মহানগর) আসনের এমপি অথবা সিটি মেয়র হবেন কমিটির সভাপতি। সদস্য পদে থাকবেন সরকারি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

গত ৯ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বরিশাল-১ আসনের এমপি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ নীতিমালা ভেঙে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি পদ ধরে রেখেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই পদে আসীনের পর থেকে কমিটির কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে। হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়নে তিন মাস পর পর কমিটির সভা হওয়ার নিয়ম থাকলেও টানা তিন বছর সভা না হওয়ারও নজির রয়েছে। ২০১৯ সালের পর তিন বছর বিরতি দিয়ে সর্বশেষ সভা হয়েছে ২০২২ সালের ১৬ জুন। এর পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও আর সভা হয়নি। আগের তিন বছর সভা না হওয়ার বিষয়ে করোনা মহামারির অজুহাত দেখানো হয়েছে। এত বছরে কেন কোনো সভা হয়নি– তার উত্তর নেই কারও কাছে।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দলের তৎকালীন নগর সভাপতি ও পরে সদরের এমপি শওকত হোসেন হিরন শেবাচিম স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি হন। তিনি ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল মারা গেলে পদটি শূন্য হয়। তখন সিটি মেয়র ছিলেন বিএনপির আহসান হাবিব কামাল (প্রয়াত)। রাজনৈতিক কারণে তাঁর সভাপতি হওয়ার সুযোগ ছিল না। একই বছর শূন্য আসনে উপনির্বাচনে এমপি হন হিরনপত্নী জেবুন্নেছা আফরোজ। পদাধিকার বলে তিনিই শেবাচিম স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা। তাঁকে টপকে ওই বছরের শেষভাগে সভাপতি হন হাসানাত আবদুল্লাহ। বরিশালের রাজনীতিতে তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। এর পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাহিদ ফারুক শামীম সদরের এমপি হলেও স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি পদে পরিবর্তন আসেনি।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, কমিটির সভা নিয়মিত না হওয়ায় হাসপাতাল উন্নয়নসংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সময়মতো নেওয়া যায় না। এমনকি সিদ্ধান্ত জানতে ফাইলপত্র নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগৈলঝাড়ার সেরালে হাসানাত আবদুল্লাহর বাড়ি পর্যন্ত যেতে হয়। ২০১৮ সালে হাসপাতালের একজন সহকারী পরিচালকের কক্ষ কয়েক লাখ টাকা ব্যয়ে সভাপতির কক্ষ হিসেবে সাজানো হয়। এক দিনও ওই কক্ষে বসেননি হাসানাত। করোনার সময়ও হাসপাতালে এক দিনও তাঁর উপস্থিতি ছিল না।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিশাল নাগরিক উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি পদটি ‘নজরানা’ কমিটিতে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবার বদলে তারা লাভজনক পদ হিসেবে এটা বেছে নিয়েছেন। এখানে যারা পদায়ন হন, তাদের অনেকেই এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন না। এ কারণে হাসপাতালের প্রতি তাদের মায়ার ঘাটতি আছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক বরিশাল মহানগর সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, হাসানাত আবদুল্লাহ যেভাবেই সভাপতি হন, এখন হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে জনগণের প্রতিনিধি তিনি। তাঁর গাফিলতিতে অব্যবস্থাপনার দায় তিনি কি নেবেন? প্রয়োজনে তাঁকে প্রতিনিধি নিয়োগ করে নিয়মিত সভা করে কমিটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির ভিত্তিতে হাসানাত আবদুল্লাহকে সভাপতি করে ২০১৪ সালে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা। তাদের সময়ের সঙ্গে সমন্বয় না হওয়ায় কমিটির সভা নিয়মিত করা যাচ্ছে না। এতে হাসপাতাল উন্নয়ন কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বরিশাল-৫ আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। হাসনাত আবদুল্লাহ এমপিকেও কয়েকবার ফোন করা হয়। তিনিও সাড়া দেননি।

আরও পড়ুন

×