ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

রাতে অপবাদ দিয়ে মারধর, সকালে মিলল ঝুলন্ত মরদেহ

রাতে অপবাদ দিয়ে মারধর, সকালে মিলল ঝুলন্ত মরদেহ

ফাইল ছবি

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৩ | ০৫:২৩

ঢাকার ধামরাইয়ে হাছেন আলী (৪৫) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে উপজেলার কুনী কুশুরা গ্রামের একটি ব্লক তৈরির কারখানার পাশে পাওয়া যায় তাঁর মরদেহ। হাছেন একটি বাসচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে তাঁকে আগের রাতে ওই ব্লক তৈরির কারখানায় মারধর করা হয়। সেখানে হাছেনকে এক লাখ টাকা জরিমানাও করেন সালিশকারীরা। সকালে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়।

হাছেন আলী কুনী কুশুরা গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি জনসেবা পরিবহনের একটি বাসচালকের সহকারী ছিলেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, একই গ্রামের জুলমত আলীর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। বুধবার রাতে সেই অটোরিকশার ব্যাটারি চুরি যায়। এ জন্য জুলমত সন্দেহবশত হাছেনকে কুশুরা মাদ্রাসার পাশ থেকে তুলে নিয়ে যান।

তাঁকে নেওয়ার সময় কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের ভাই নজরুল ইসলামসহ পাঁচ-ছয়জন ছিলেন। মাদ্রাসার দক্ষিণপাশেই নজরুলের মালিকানায় একটি ব্লক তৈরির কারখানা রয়েছে। সেখানে ইজিবাইকের ব্যাটারি চুরির অভিযোগ তুলে হাছেনকে মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে তাঁকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ওই ব্যক্তিরা।

হাছেন আলী ব্যাটারি চুরিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। একই সঙ্গে জরিমানা দিতে পারবেন না বলে জানান। রাতে আর বাড়ি ফেরেননি হাছেন আলী। শনিবার সকালে ওই ব্লক তৈরির কারখানার পশ্চিম পাশের একটি গাছে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। তারা পুলিশে সংবাদ দেন। কুশুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আবদুল জব্বার দুপুরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠান।

এসআই আবদুল জব্বার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন, নজরুলসহ কয়েকজন মিলে ব্যাটারি চুরির অভিযোগে হাছেন আলীকে শুক্রবার রাতে মারধর করে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন। তারা দুপুরে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেন। হাছেনের শরীরে পুরোনো আঘাতের অনেক চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

ধামরাই পৌর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন হাছেনের স্ত্রী পারভীন আক্তার। তিনি বলেন, সকালে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পান। বাড়ি গিয়ে জানতে পারেন, ব্যাটারি চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ধরে নিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। পরে এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়। ক্ষোভ থেকে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। এলাকার কয়েক ব্যক্তি শনিবার রাতের মধ্যেই বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন। না হলে থানায় মামলা করবেন।
এ ব্যাপারে জুলমত আলী ও নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে নজরুলের কারখানায় হাছেনকে মারধর ও জরিমানার অভিযোগ অস্বীকার করে ভাই ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি দাবি করেন, হাছেন আলী মাদকসেবী।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

আরও পড়ুন

×