দমে না যাওয়া সুমাইয়া প্রশাসনিক ক্যাডার হতে চায়

বাবা–মায়ের সঙ্গে সুমাইয়া আক্তার
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩ | ০৯:২৪ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩ | ০৯:২৪
সব বই না থাকায় সহপাঠীদের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ত মেয়েটি। বিদ্যালয়ে যাওয়া–আসা করত হেটে। ভ্যানচালক বাবার আয়ে চলে পরিবার। বাবার রোজগার কম হলে তিন বেলা খাবারও জুটত না তার। এই মেয়েই এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে।
দমে
না যাওয়া মেয়েটির নাম সুমাইয়া আক্তার। সে শিবচরের মাদবরচর ইউনিয়নের লপ্তিকান্দি গ্রামের
ভ্যানচালক মো. হবি মোল্লা ও তাসলিমা বেগমের মেয়ে। চার ভাইবোনের মধ্যে সে তৃতীয়। পাঁচ্চর
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়।
কয়েক
বছর আগেপদ্মা নদীর ব্যাপক ভাঙ্গনের শিকার হয়ে চরজানাজাত থেকে এই এলাকায় আসে সুমাইয়ার
বাবা–মা। বছরে ৫ হাজার টাকায় এক টুকরো জমি ভাড়া নিয়ে দোচালা ঘর তুলে থাকছে তারা। বড়
বোনের বাচ্চা হওয়ার পর স্বামী তাড়িয়ে দেওয়ায় সেও আশ্রয় নিয়েছে এ বাড়িতে।
অভাবের
তাড়নায় নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় সুমাইয়ার বিয়ে ঠিক করে মা–বাবা। পরে সুমাইয়া প্রধান
শিক্ষকের কাছে আশ্রয় নেয়। প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় পড়াশুনা চালিয়ে যায় সে। ফরম পূরণের
টাকাও দেয় প্রধান শিক্ষক। পরীক্ষার ফলাফলের পর বাড়িতে মিষ্টিও নিতে পারেনি বাবা। তবে কলেজে ভর্তি ও পড়াশুনার ব্যয়
নিয়েও শঙ্কিত পরিবারটি।
সুমাইয়ার
মা তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আমরা কোনো দিন সুমাইয়াকে ভালো খাবার দিতে পারিনি। মেয়ের স্বপ্ন
অনেক বড়। কিন্তু ওর স্বপ্ন পূরণ করার সাধ্য আমাদের নেই। এখন ওর লেখাপড়া কীভাবে চালাবো
সেটাই বুঝতে পারছি না।’
সুমাইয়ার
বাবা মো. হবি মোল্লা বলেন, ‘স্কুলের স্যারেরা সাহায্য না করলে মেয়ের লেখাপড়াই হইত না।
ওর স্বপ্ন অনেক বড় কলেজে পড়ার।’
সুমাইয়া
আক্তার বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ঢাকায় ভিকারুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করা।
আমি পড়ালেখা করে মানুষের সেবা করেত বিসিএস দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডার হতে চাই।’
পাঁচ্চর
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সামসুল হক বলেন, সুমাইয়া খুবই মেধাবী।
তবে অতি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। তাই সমাজের
বিত্তবানদের সহযোগিতা করলে তার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জল হবে।