ডিমলায় ভূমিহীনদের প্রকল্প
আশ্রয়ণের ঘর বিক্রি লাখ টাকায়

প্রতীকী ছবি
নীলফামারী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৩৮ | আপডেট: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৩৮
ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত দেশ গড়ার অংশ হিসেবে জনপ্রতি ২ শতাংশ জমি ও বসতঘর নির্মাণ করে দিয়েছিল সরকার। খাসজমিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভিটাপ্রতি খরচ হয় ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। সেই ঘরগুলো জায়গাসহ বেচাকেনা হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকায়। এ ঘটনা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কেল্লাপাড়া গ্রামের। এসব বসতি হস্তান্তরে লোক বুঝে কারও কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত। অনেক ঘর এখনও পড়ে আছে খালি ও তালাবদ্ধ। ঠিকানাগুলো সুবিধাভোগীদের অনেকে টাকার বিনিময়ে পেয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, ঘর বরাদ্দের সময়ই অনিয়ম হয়েছে। টাকার বিনিময়ে উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন অনেক জনপ্রতিনিধি। বঞ্চিত হন বহু প্রকৃত অসহায়-দরিদ্র। গৃহ ও ভূমিহীন না হয়েও দুর্নীতির মাধ্যমে ঘর বাগিয়ে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে মোটা দামে। ঘর পাওয়ার পর সচ্ছল হলে সেগুলো ফেরত দেওয়ার বিধান থাকলেও সুবিধাভোগীরা ঘরগুলো স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রি করছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কেল্লাপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০টি ঘরের মধ্যে ১০টি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। কিনে নেওয়া ব্যক্তিরা সেখানে বসবাস করছেন। অন্তত ১৫টিতে ঝুলছে তালা। এর মধ্যে ৩২ নম্বর ঘরটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন রমিছা বেগম। কিছুদিন সেখানে বসবাসও করেন তিনি। পরে আফাজ উদ্দিনের কাছে ৯৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আফাজ উদ্দিন বলেন, জরুরি চিকিৎসার জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন হয়েছিল রমিছার। তাই তিনি ঘরটি বেচে দিয়েছেন।
২৬ নম্বর ঘর বরাদ্দ পান সিদ্দিকুর রহমান ও মমেনা খাতুন দম্পতি। সেই ঘর ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন সোকজান বেগম। তিনি জানান, ভিক্ষাবৃত্তি করে খেয়ে না খেয়ে ৫০ হাজার টাকায় ঘরটি কিনেছেন। সিদ্দিকুর তাঁর নামে চুক্তিপত্র করে দিয়েছেন। আর কেউ তাঁকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না।
২৫ নম্বর ঘর বরাদ্দ পান নুর ইসলাম দম্পতি। তাদের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকায় ঘরটি কিনে বসবাস করছেন শাহ আলম ও তাঁর পরিবার। ঘর বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন নুর ইসলাম। তিনি বলেন, শাহ আলম ভূমিহীন। তাই তাঁকে এমনি সেখানে থাকতে দিয়েছেন।
৫০ নম্বর ঘর বরাদ্দ পান সুরুজ্জামান আলী ও তাঁর স্ত্রী হালিমা খাতুন। তারা ৫৭ হাজার টাকায় তা বেচে দিয়েছেন মহছেনা বেগম ও মমিনুর রহমান দম্পতির কাছে। ৪৪ নম্বর ঘর বরাদ্দ পান লিটন ইসলাম। জাবিতন বেগম ৫৫ হাজার টাকায় কিনে পরিবার নিয়ে সেখানে বাস করছেন।
একইভাবে ১২, ৩০, ৩৩, ৩৭ ও ৩৯ নম্বর ঘরগুলো টাকার বিনিময়ে হাতবদল হয়েছে। এসব ঘরে বসবাসকারী ব্যক্তিরা ঘর কিনে নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। অনেকেই বলেছেন বিক্রেতাদের তারা চেনেন না।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, ঘর বেচাকেনার বিষয়টি জানি। উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মাসিক সভায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে দুটি তালিকা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা বিক্রি করেছেন তাদের ও যারা থাকেন না বা যাদের ঘরে তালা ঝুলছে তাদের পৃথক দুটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তিনি এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর টাকার বিনিময়ে হাতবদলের কোনো সুযোগ নেই। আর সরকারি ঘর কেউ বিক্রি করে থাকলে, তা অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।