প্রেমিকের বুদ্ধিতে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে স্বামীকে হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০
নোয়াখালীর সেনবাগে পরকীয়া প্রেমের জের ধরে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন স্ত্রী। পরে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা স্বামীকে হত্যা করে ঘরের দরজার সামনে ফেলে রেখে যায় বলে প্রচার করেন স্ত্রী। প্রেমিক পরিকল্পনার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডেও অংশ নিয়েছেন। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রী হত্যার কথা স্বীকার করেন। ৬ আগস্ট রাতে সেনবাগ উপজেলার ডুমুরুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণকাটা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। নিহত হোটেল ব্যবসায়ীর নাম মো. মঈন উদ্দিন (৪৫), তিনি উপজেলার হরিণকাটা গ্রামের ফকিরবাড়ির মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। চট্টগ্রাম শহরের ডবলমুরিং থানা এলাকায় খাবার হোটেল রয়েছে তার। এই ঘটনায় নিহতের মা রাহেলা বেগম বাদী হয়ে সোমবার রাতে সেনবাগ থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় মহিন উদ্দিনের স্ত্রী রজবেন নেছাকে (৩২) গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার বিকেলে নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেনবাগ থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন পাটোওয়ারী সমকালকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, খুনের শিকার মঈন উদ্দিনের বন্ধু একই গ্রামের বাসিন্দা বেকার মাসুদের (৩৮) সঙ্গে রিনার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক হয় তাদের। বিষয়টি মঈন উদ্দিন জেনে যান। বছর খানেক আগে স্ত্রীকে মৌখিক তালাক দেন। এরপর স্থানীয় লোকজন ও আত্মীয়স্বজনের অনুরোধে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রিনাকে আবার ঘরে তুলে নেন মঈন উদ্দিন; এরপর তিনি ব্যবসায়িক কাজে চট্টগ্রাম চলে যান। এই সুযোগে মাসুদ পুনরায় রিনাকে সম্পর্ক অব্যাহত করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু রিনা তাতে অস্বীকৃতি জানালে মাসুদ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং রিনা ও তার মেয়েকে ধর্ষণ শেষে হত্যার হুমকি দেয়। এতে রিনা ভয় পেয়ে মাসুদের প্রস্তাবে রাজি হন। সম্পর্ক স্থায়ী করার জন্য এক পর্যায়ে মাসুদ রিনার স্বামী মঈন উদ্দিনকে হত্যা করার প্রস্তাব দেয়। মো. মঈন উদ্দিন চট্টগ্রাম থেকে নিজের বাড়িতে এলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ আগস্ট মাসুদ ১৪টি ঘুমের ট্যাবলেট এনে রিনার কাছে দেয়। রাতের খাবার শেষে রিনা ১৪টি ঘুমের ট্যাবলেট গুঁড়া করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে মো. মঈন উদ্দিনকে খাইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর মঈন উদ্দিন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হন। রাত ৩টার দিকে মাসুদ আসে দুই সহযোগীসহ। ঘুমন্ত মঈন উদ্দিনকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় মঈন উদ্দিনকে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানান, হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে রিনা নাটক সাজায়। পরদিন সকালে রিনা পুলিশ ও প্রতিবেশীদের জানান, ৬ আগস্ট রাত ১১টার দিকে মঈন উদ্দিন অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন পেয়ে কথা বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে যান। ওই ঘটনার পর রিনা ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ৩টার দিকে তার ঘুম ভাঙলে ঘরের দরজায় এসে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মঈন উদ্দিন পড়ে আছেন। ওই সময় তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মঈন উদ্দিনকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
সেনবাগ থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘হত্যার ঘটনায় স্ত্রী রজবেন নেছা রিনাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আসামি মাসুদ ও তার সহযোগীরা পলাতক রয়েছে। গ্রেপ্তার রিনা স্বেচ্ছায় হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) নাজমুল হাসান রাজীব বলেন, ‘গ্রেপ্তার রিনা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডে তার প্রেমিক মাসুদসহ আরও দুজন অংশ নিয়েছে। তার বক্তব্য পুলিশ খতিয়ে দেখছে।’