ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

দ্বিগুণ লাভের ফাঁদে অবসরে যাওয়া ২১ সেনাসদস্য

দ্বিগুণ লাভের ফাঁদে অবসরে যাওয়া ২১ সেনাসদস্য

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৩ | ১৬:২৮ | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩ | ১৬:২৮

অবসরপ্রাপ্ত ২১ সেনাসদস্যের পেনশনের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্পোরাল ইমদাদুল হক লিটনের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

রোববার শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মানববন্ধনে এই দাবি করেন তাঁরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। পরে টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ওয়ারেন্ট অফিসার, কর্পোরাল, সার্জনসহ বিভিন্ন পদের ২১ সেনাসদস্য ২০১৪ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। সেনাবাহিনীতে চাকরির সুবাদে সদর উপজেলার খাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কর্পোরাল ইমদাদুল হক লিটনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাদের। অবসরের দুই বছর পর রাজধানীর ব্রাইট ফিউচার হোল্ডিং লিমিটেড এবং বেস্ট হোম ডেভেলপারস লিমিটেডের ২২ নম্বর পরিচালক পদে যোগ দেন তিনি। কোম্পানি থেকে তাঁকে শেরপুর জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় দ্বিগুণ লাভের আশা দেখিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ২১ সেনাসদস্যের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা নেন তিনি। এখন টাকা দিতে টালবাহানা করছেন কোম্পানিটির এই কর্মকর্তা।

অভিযোগ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন থানায় ইমদাদুল হকের বিরুদ্ধে ২৮-২৯টি মামলা হয়েছে। তিনি জামিনে আছেন এবং সুযোগ খুঁজছেন বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার। তিনি যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে জন্য তাঁর পাসপোর্ট ও ভিসা জব্দের অনুরোধ করেছেন ভুক্তভোগীরা। একই সঙ্গে শেরপুর শহরের শেরীপাড়ায় তাঁর তিন তলা বাড়ি, ৩৫ লাখ টাকার প্লট ও জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তিন একর জমি জব্দের আবেদন জানানো হয়।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার জুবের আলীর ভাষ্য– লিটন ঢাকা গিয়ে দুটি কোম্পানির পরিচালক হয়ে শেরপুর আসেন। বিভিন্ন সময় তাদের বোঝান ওই কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগ করলে তিন বছর অথবা চার বছরে দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যাবে। তার কথায় বিশ্বাস করে এফডিআরের ১২ লাখ ৯০ হাজার এবং পেনশনের ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ও স্ত্রীর ১১ লাখ টাকা লিটনের হাতে তুলে দেন তিনি। প্রথম কয়েক বছর লিটন তাঁকে ৫ লাখ টাকা লাভ দেন। এর পর আর কোনো টাকা দেননি।

সাবেক সেনাসদস্য আবুল হাশেম জানান, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অবসরে যান তিনি। সবার কাছ থেকে শুনে ২০১৯ সালে ১৯ লাখ টাকা লিটনের কাছে দেন। তাঁকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ২০০ টাকা মাসিক হিসেবে ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা লাভ দেওয়া হয়েছে। হঠাৎই টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন লিটন।

কথা হয় হরিণধরা গ্রামের বাসিন্দা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জন আনসার আলীর সঙ্গে। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, ১৮ লাখ টাকা পেনশন পেয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১৭ লাখ টাকা নিয়েছেন লিটন ও তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তার। চার বছরে ৩৪ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলেন তারা। কিন্তু ৪ লাখ টাকা লাভ দেওয়ার পর টালবাহান শুরু করেছেন লিটন।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করলে ইমদাদুল হক লিটনের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে তার ছোট ভাই শেরপুর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি সৎভাবে জীবনযাপন করি। ভাইয়ের বিষয়ে খুব একটা জানি না। সত্য, মিথ্যা কী তাও জানি না।’ তাঁর ভাষ্য, তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে একেকজন সাত-আটটি করে মামলা করেছেন। তাঁর ভাইকে বলেছেন, যদি তাঁর কাছে কেউ টাকা পেয়ে থাকে তাহলে জমিজমা বিক্রি করে হলেও ঋণ যেন পরিশোধ করেন।

আরও পড়ুন

×