রাজারহাট
হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ

রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:০২ | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:০২
বিচারাধীন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামিকে রাজারহাটের রতিগ্রাম বিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বুধবার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ওই শিক্ষকের এমপিওভুক্তি না করার দাবিতে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন।
জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম বিএল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগে ২০২২ সালের ৯ মার্চ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জোদ্দার আলী নামে এক ব্যক্তি রাজারহাট সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন, যা বিচারাধীন। এ অবস্থায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠে। এরই অংশ হিসেবে বিতর্কিত কমিটি প্রধান শিক্ষক, নৈশপ্রহরী, আয়া ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে গোপনে অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে এবং তাদের মনোনীতদের নিয়োগ দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। গত জুন মাসে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত খোরশেদ আলম দুলাল উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা গ্রামের আলোচিত তোসাব্বর হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামি। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ফৌজদারি মামলার আসামিকে শিক্ষক বা কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করে অর্থের বিনিময়ে ওই পদে নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ পরীক্ষার আগে মৃত তোসাব্বরের শ্যালক ছাকের আলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও ডিজির প্রতিনিধির কাছে হত্যা মামলার আসামিকে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। দুলাল এর আগে পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।
মামলার নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চতুরা গ্রামে তোসাব্বর হোসেন নামে একজন খুন হন। এ নিয়ে থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশি তদন্তে ওই গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে ও সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দুলালকে প্রধান আসামি করে পুলিশ আদালতে হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করে। এর আগে ওই মামলায় দুলাল প্রায় দুই বছর হাজতবাস করেন। মামলাটি বিচারাধীন।
এদিকে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও এলাকাবাসী বলেন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রায় অর্ধকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে বিদ্যালয়টিতে।
খোরশেদ আলম দুলাল হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি থাকার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মামলা থাকলেও এখনও আদালতের রায় কিংবা অপরাধ প্রমাণিত হয়নি।
রতিগ্রাম বিএল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম বলেন, মামলা থাকা অবস্থায় জেল থেকে নির্বাচন করা গেলে প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়া যাবে না কেন? সাজা হলে তখন নিয়োগ বাতিল হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হয়েছে। ফৌজদারি মামলার বিষয়টি তাঁর দেখার বিষয় না, এটা পুলিশের দায়িত্ব। তবে বিভাগীয় মামলা থাকলে তিনি আপত্তি করতেন বলে জানান।
ডিজির প্রতিনিধি ও কুড়িগ্রাম সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জেসমিন আরা হক বলেন, মামলার বিষয়টি জানা ছিল, তিনি সাজাপ্রাপ্ত হলে এমনিতেই চাকরি চলে যাবে। নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন অভিযোগপত্র এখনও দেখেননি, দেখে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
- বিষয় :
- রাজারহাট
- প্রধান শিক্ষক
- হত্যা
- মামলা