ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ফরিদপুরে সাপের কামড়ে ৩ মৃত্যু, এন্টিভেনম না থাকায় ক্ষোভ

ফরিদপুরে সাপের কামড়ে ৩ মৃত্যু, এন্টিভেনম না থাকায় ক্ষোভ

ফরিদপুর অফিস

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:০১ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৩ | ১৭:০৪

ফরিদপুরের তিনটি উপজেলায় গত দুইদিনে বিষাক্ত সাপের কামড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন‒ ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের নুরজাহান (৫৫), আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের রুদ্রবানা গ্রামের নেপুর মোল্যার ছেলে ওয়াজ কুরুনী (২০) ও বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ভাবখণ্ড গ্রামের বর্ষণ মহন্ত (১১)।

নিহত তিনজনকেই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে এন্টিভেনম না থাকায় তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। বর্ষা মৌসুমে এন্টিভেনম সংকট থাকায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন নাগরিক কমিটি।

বৃহস্পতিবার ভোরে আলফাডাঙ্গায় পাট কাটতে গিয়ে বিষাক্ত সাপের কামড়ে আহত হন আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াজ কুরুনী। পরে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. বাবার আলী জানান, ওয়াজ কুরুনীকে সাপে কাটলে আলফাডাঙ্গা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এন্টিভেনম না থাকায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে বুধবার দুপুরে বোয়ালমারী উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ভাবখণ্ড গ্রামের কিশোর বর্ষণ মহন্ত তাদের বসত ঘরের ভিতরে মাটির গর্তের ভিতরে পা দিলে বিষধর সাপ তাকে কামড়ে দেয়। পরে তাকে পাশের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে এন্টিভেনম না থাকায় তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল হাসপাতালে নিতে বলা হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তার মরদেহ স্থানীয় শ্মশানে দাহ করা হয় বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর গ্রামের নুরজাহান বাড়ির পাশ থেকে খড় আনতে গেলে সাপ তাকে কামড়ে দেয়। নুরজাহানের ভাই চুন্নু মোল্লা জানান, তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তিনি অভিযোগ করেন, হাসপাতলে নিয়েও তার বোনের চিকিৎসা করাতে পারেননি, চিকিৎসক তাদের জানান ওষুধ (এন্টিভেনম) নেই।

এন্টিভেনম না থাকা প্রসঙ্গে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'আমাদের সংগ্রহে যতটুকু এন্টিভেনম ছিল তা ব্যবহার হয়ে গেছে। আমরা চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি, আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই এন্টিভেনম পেয়ে যাব। তখন আমরা জেলার সকল উপজেলায় সরবরাহ করতে পারবো।'

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, 'স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আমরা যোগাযোগ করেছি। যেহেতু ফরিদপুর অঞ্চলে রাসেল ভাইপারের উপদ্রব রয়েছে, আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যেই এন্টিভেনম পেয়ে যাব। তখন চিকিৎসার আর কোনো সমস্যা হবে না।'

এন্টিভেনম সংকটে মানুষের প্রাণহানি প্রসঙ্গে ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি এডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, 'বর্ষা মৌসুমে স্বাভাবিকভাবেই সারাদেশে সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। এই সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি প্রয়োজনীয় এন্টিভেনম সরবরাহ না করে, তাহলে মানুষের প্রাণহানি বেড়ে যাবে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেবেন।'

আরও পড়ুন

×