কাস্টমস ডিউটি ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি
চুনাপাথর আমদানি বন্ধে রাজস্ব ঘাটতির শঙ্কা

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৯ আগস্ট ২০২৩ | ১০:০১
কাস্টমস ডিউটি ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিবাদে সুনামগঞ্জের ছাতকের ৩টি রুটসহ সিলেট অঞ্চলের সব রুটে ভারত থেকে চুনাপাথর ও বোল্ডার আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন আমদানিকারকরা। তিন দিন ধরে এসব রুটে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, বেসরকারি সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাফার্জ-হোলসিম কোম্পানিকে সুবিধা দিতে হঠাৎ করেই শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সব রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য চুনাপাথর-বোল্ডার আমদানি বন্ধ ঘোষণায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমদানি বন্ধ থাকায় দিনমজুর শ্রমিকরা পড়েছেন বিপাকে। পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট অঞ্চলে জৈন্তাপুরের তামাবিল, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বাগলি, বড়ছড়া ও চারগাঁও এবং ছাতকের ইছামতী ও চেলা রুটে ভারত থেকে চুনাপাথর ও বোল্ডার পাথর আমদানি করা হয়। এসব চুনাপাথর আমদানিতে প্রতি টন সাড়ে ১১ ডলার ও বোল্ডার ১১ ডলার কাস্টমস ডিউটি দিতে হতো। গত সপ্তাহে হঠাৎ করে কাস্টমস ডিউটি বোল্ডারে ১১ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৩ ডলার এবং চুনাপাথরে ডিউটি চার্জ সাড়ে ১৩ ডলার নির্ধারণ করায় আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তাই ব্যবসায়ীরা আলোচনা করে গত বুধবার থেকে সিলেট অঞ্চলের সব রুটে চুনাপাথর-বোল্ডার আমদানি বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে কাস্টমস বিভাগের সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে চুনাপাথর ও বোল্ডার প্রতি টনে সাড়ে ১২ ডলার ডিউটি নির্ধারণ করে কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, লাফার্জ-হোলসিম কোম্পানি আইনবহির্ভূতভাবে ভারত থেকে কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে চুনাপাথর এনে ফ্যাক্টরির ভেতরে ক্রাশ করে বিভিন্ন প্রজেক্টে বিক্রি করছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইটেম হিসেবে লাফার্জ-হোলসিম ডিউটি ফ্রি পাচ্ছে, ভ্যাট লাগছে না। অথচ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আইটেম ঘোষণা দিয়ে তারা চুনাপাথর বাজারে বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, লাফার্জ-হোলসিম কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে প্রতিটি বর্ডারে রেট বাড়িয়ে দিতে বলেছে।
ছাতক লাইমস স্টোন ইম্পোটার্স অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সভাপতি ও সুনামগঞ্জ চেম্বারের পরিচালক আহমদ শাখায়াত সেলিম চৌধুরী জানান, বর্তমানে ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে কাস্টমস বিভাগ থেকে পাথর আমদানিতে টনপ্রতি ২ ডলার ডিউটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারত থেকে চুনাপাথর-বোল্ডার আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
লাফার্জ-হোলসিম বাংলাদেশের হেড অব কমিউনিকেশন তৌহিদুল ইসলাম জানান, চুনাপাথর ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। লাফার্জ-হোলসিম সরকারের সব অনুমতি এবং অনুমোদন নিয়েই এগ্রিমেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করছে।
সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের (সদরদপ্তর) উপকমিশনার মো. সোলেইমান জানান, ডলারের মূল্যস্ফীতির কারণেই শুল্ক বেড়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশনার আলোকেই মূলত অ্যাসেসমেন্ট ভ্যালু বেড়েছে। এরপরও ব্যবসায়ীদের এ নিয়ে আলোচনার পথ খোলা রয়েছে। লাফার্জ-হোলসিমকে সুবিধা দেওয়ার বিশেষ কোনো সুযোগ তাদের হাতে নেই।
- বিষয় :
- চুনাপাথর
- রাজস্ব আয়
- চুনাপাথর আমদানি