ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বগুড়ার নন্দীগ্রাম

আ’লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখল

আ’লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে জমি দখল

সড়ক ও জনপথের জমিতে লাগানো হয়েছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সাইনবোর্ড - সমকাল

এস এম কাওসার, বগুড়া

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০১:২৯ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০১:২৯

বগুড়ার নন্দীগ্রামে সড়ক ও জনপথের একটি জমিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সেখানে টিনের বড় একটি ঘরও বানানো হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের এই উপজেলা শাখার একটি অফিস থাকা সত্ত্বেও সরকারি জমি দখল করা হয়েছে। মহাসড়ক ঘেঁষে ওই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের আগে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিও নেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় সাইনবোর্ডটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ দলীয় নেতারা।

স্থানীয়রা জানান, মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজের সময় নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হাটখোলা-পূর্বপাড়া রাস্তার মাথায় ব্রিজ এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীর বাড়ির পূর্বপাশে মহাসড়ক ঘেঁষা জায়গাটিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বেশ কিছুদিন আগে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জায়গাটি প্রয়োজন হবে বিধায় সেটি খালি করে। কিন্তু তিন মাসের মাথায় জমিটি দখল করেছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী। সেখানে বড় টিনের ঘর নির্মাণকাজ দেখভাল করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ কুমার, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ কামাল ফারুক, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক সানোয়ার হোসেন মিলন এবং পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিরুল ইসলাম।

এই ঘর নির্মাণের কারণে সেখানকার অনেক ছোট দোকানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। কারণ, এই ঘরের পেছনে রয়েছে ছোট বেশ কয়েকটি বৈধ দোকান। আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনাটির কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঘর পেছনে পড়ে যাবে, এতে তাদের ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ বিষয়ে দোকানদাররা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে অনুনয়-বিনয় করার পরও তারা পাত্তা দেননি।

এদিকে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ গেট এলাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় একটি কার্যালয় রয়েছে। দলের সাবেক সভাপতি মরহুম জাহেদুর রহমান প্রায় ১০ বছর আগে সেই অফিস বানান। ওই কার্যালয়ে বসেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। একটি কার্যালয় থাকার পরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় আরেকটি কার্যালয় নির্মাণ করার আগে দলীয় সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাও করা হয়নি। এর কারণে অনেক নেতাই বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক নেতাকর্মী জানান, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নামে জায়গা দখল করার পরিকল্পনা করছেন কয়েকজন। কেউ সামনে আছেন, আবার কেউ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। 

অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক ও সানোয়ার হোসেন মিলন প্রথমে দলীয় কার্যালয় করার জন্য অবৈধভাবে সরকারি জায়গা দখল করেন। পরে সুযোগ বুঝে সাইনবোর্ড সরিয়ে দোকানঘর হিসেবে ভাড়া দেন তারা। নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডসহ কয়েকটি স্থানে এমন কয়েকটি ছোট দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। বর্তমানে বড় সাইজের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এটিও একসময় ভাড়া দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে।   

আবদুর রাজ্জাক ও সানোয়ার হোসেন মিলন দু’জনেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দলীয় কার্যালয় করার জন্যই সেখানে ঘর বানানো হচ্ছে। দলের অনেক নেতা বিষয়টি জানেন। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ কুমার বলেন, সড়ক ও জনপথের পরিত্যক্ত ওই জায়গায় দলীয় কার্যালয় করা হলেও কর্তৃপক্ষ যখনই চাইবে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হবে। তাছাড়া জায়গাটির জন্য রোববার (গতকাল) সড়ক ও জনপথের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের একটি দলীয় কার্যালয় রয়েছে। সেখানে বসেই নিয়মিত রাজনৈতিক কার্যক্রম করা হয়। ক’দিন আগে দলের ছোট পদে থাকা দু’জন আমার কাছে আসেন এবং সড়ক ও জনপথের জায়গায় আরেকটি দলীয় কার্যালয় করার কথা বলেন। তখন আমি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কিছু বলিনি। পরে জানতে পারলাম ওই জায়গায় দলীয় অফিস নির্মাণের কাজ চলছে।

সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন কোথাও দলীয় কার্যালয় করা হলে দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, কিন্তু হঠাৎ করে সেখানে কে বাবা কারা দলীয় কার্যালয় করছে তা আমার জানা নেই।

বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মাসিক সমন্বয় সভায়ও আলোচনা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা আমাদের জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেব। ওই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের আগে কেউ অনুমতি নেননি। কেউ জমিটি পাওয়ার জন্য আবেদনও করেনি।

আরও পড়ুন

×