ময়মনসিংহ বিএনপি
কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে সরব, অগোছালো তৃণমূল

মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০১:৩২ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২৩ | ০১:৩৮
ময়মনসিংহ বিএনপিতে দুটি জেলা ইউনিট ও একটি মহানগর ইউনিট রয়েছে। সদর উপজেলাসহ ছয় উপজেলা নিয়ে দক্ষিণ জেলা এবং সাত উপজেলা নিয়ে উত্তর জেলা বিএনপি। ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে মহানগর ইউনিট। দুটি জেলা ও মহানগর ইউনিটের আহ্বায়করা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি করবেন এবং তারা কোনো পদে প্রার্থী হতে পারবেন না বলে অলিখিত নির্দেশনা ছিল। বাস্তবে তা হয়নি। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তৃণমূলে কার্যক্রম অগোছালো। মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠনগুলোও ধুঁকছে।
মহানগর ইউনিটময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রথম মহানগর বিএনপির কমিটি হয়। অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ও অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীসহ ১০ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে মহানগর বিএনপির ৬০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করা হয়। দ্রুত ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন করে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার বিষয়ে নির্দেশনা ছিল। নেতারা বলছেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট মহানগর। চলমান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও কমিটি না থাকা, কোনো পরিচয় বহন করতে না পারার আক্ষেপ তৃণমূলে। নেতাদের এক পক্ষ বয়োজ্যেষ্ঠদের দায়িত্ব দিতে চাইলেও অন্য পক্ষ চায় তৃণমূলে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবে এমন লোকজন নেতৃত্বে আসুক। এ নিয়ে মহানগর আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের দ্বন্দ্বের কারণে নগরের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৯টিতে আহ্বায়ক কমিটি করতে পেরেছেন তারা। বাকিগুলোয় কমিটি গঠন ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে।
নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ বলেন, বয়স্ক নেতারা চান তাদের সঙ্গে রাজনীতি করা বার্ধক্য চলে এসেছে এমন লোকজন নেতৃত্বে আসুক। অথচ গতিশীল রাজনীতির জন্য তরুণ নেতৃত্ব দরকার। এ নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় তৃণমূল কমিটি করা যাচ্ছে না।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলাম বলেন, তৃণমূলে কর্মী সমাবেশ করে সব ঠিকঠাক করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বসতে পারি না, জটিলতা হয়। এ কারণে দেরি হচ্ছে। দু’জন যুগ্ম আহ্বায়ক ভেটো দেওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা
দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি হয় ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর। ডা. মাহবুবুর রহমান লিটনকে আহ্বায়ক এবং জাকির হোসেন বাবলু, আলমগীর মাহমুদ আলমসহ ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৫২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হয়। এখানেও অবস্থা অগোছাল। সদর উপজেলায় কমিটি হয়নি দীর্ঘদিনেও। দলের কেন্দ্র থেকে এক বছর আগে সময় বেঁধে দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। মুক্তাগাছা ও ত্রিশাল উপজেলা ছাড়া ফুলবাড়িয়া, ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলায়ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা রয়েছে। মুক্তাগাছায় আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক দিয়ে দুই সদস্যের কমিটি এবং ত্রিশালে তিন সদস্যের কমিটি দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি আনলেও অন্য উপজেলাগুলোতে সাত থেকে আটজনকে স্বাক্ষর ক্ষমতা দেওয়ায় জটিলতা বেড়েছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন ও যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বাবলুকে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সাক্ষর ক্ষমতাসম্পন্ন অপর যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সাংগঠনিক কাঠামোতে অনেক ঝামেলা থাকতে পারে, মতানৈক্য থাকতে পারে, বিভিন্ন গ্রুপ থাকলেও সবাই এক বিন্দুতে মিলবে। সবকিছু কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।
উত্তর জেলা
উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ২০২২ সালের ১৬ জুন ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় অধ্যাপক এ কে এম এনায়েত উল্লাহ কালামকে ও যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। দায়িত্ব পেয়ে গত বছর জেলা ও বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতারা উপজেলাগুলো ঘুরে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কর্মী সম্মেলন করেন। উপজেলা ও পৌরসভাগুলোতে নতুন কমিটি করা যায়নি। বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে দুই থেকে চারটি করে গ্রুপ।
মোতাহার হোসেন বলেন, দলে যে বিশৃঙ্খলা ছিল, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। নেতারা অনেক উজ্জীবিত। তৃণমূলে সাংগঠনিক কমিটি না থাকায় কোনো প্রভাব পড়ছে না।
দলের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, তারা তৎপর হলেও নানা বাস্তবতায় একটু দেরি হচ্ছে। চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। সময় বুঝে কমিটিগুলো ঘোষণা করা হবে।
- বিষয় :
- বিএনপি
- ময়মনসিংহ
- তৃণমূল
- তৃণমূল বিএনপি
- ময়মনসিংহ