বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অন্দরমহল: শেষ পর্ব
লক্কড়ঝক্কড় বাসে সাফারি ভ্রমণ

ইজাজ আহ্মেদ মিলন, গাজীপুর
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৫৬ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৫৬
কোর সাফারির ভেতরে ভয়ংকর সব হিংস্র প্রাণীর আবাসস্থল। নিয়ম অনুযায়ী, বাসের দরজা-জানালা বন্ধ করে দর্শনার্থীদের ওই অঞ্চল ঘুরে দেখানোর কথা। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জানালা খোলা বাসে কোর সাফারি ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থী। যে কোনো সময় হিংস্র কোনো প্রাণীর থাবায় পড়তে পারেন তারা।
পার্কে মোট আটটি মিনিবাস রয়েছে। বেশ পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় ওই গাড়িগুলোতে এসি থাকলেও বছরের পর বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আটটি বাসের মধ্যে ছয়টিই বিকল হয়ে পড়ে থাকে বেশির ভাগ সময়। যে দুটি মিনিবাসে দর্শনার্থী ঘুরে বেড়ান, তাতে নেই এসি। ফলে বাধ্য হয়ে জানালা খুলে দিতে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভেতরকার বেহাল রাস্তা। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়েই দর্শনার্থী লক্কড়ঝক্কড় গাড়িতে চড়ে কোর সাফারি ভ্রমণ করেন। রোদ কিংবা বৃষ্টি কোনো সময়ই আরামদায়ক ভ্রমণ হয় না। আনন্দ-ভ্রমণের সময় চালক-পর্যটকরা আতঙ্কে থাকেন।
গত শনিবার দুপুরে পার্কে গিয়ে দেখা যায়, শ্রাবণের আকাশে প্রচণ্ড রোদ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। দর্শনার্থীরা ঘেমে একাকার। ভাঙাচোরা রাস্তায় হেলেদুলে চলছে বাস। বাসের ভেতরে থাকা ফাতেমা আক্তার নামে মধ্যবয়সী নারীর কোলের এক শিশু কান্না শুরু করে দিল। গরম সহ্য করতে পারছিল না শিশুটি। তার কান্না থামাতে কোর সাফারির ভেতর দিয়ে চলা বাসের খোলা জানালা দিয়ে বাঘ কিংবা সিংহ দেখানোর চেষ্টা করছিলেন ফাতেমা। হরিণের বেষ্টনী পার হয়ে কোর সাফারির বাঘ-সিংহ-ভালুক বেষ্টনীতে প্রবেশ করতে রওনা হয়েছে বাস। বেষ্টনীতে প্রবেশ করার আগেই চালক আল আমিন দর্শনার্থীদের বাইরে হাত বা মাথা বের না করার জন্য সতর্ক করে দিচ্ছেন। চালকের সতর্কবার্তা যেন কারও কানেই পৌঁছেনি। প্রত্যেকেই জানালা দিয়ে হাত বের করে মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে বা ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
মিনিবাসের চালক জানান, ১০ বছর আগে কেনা বাসগুলোর এসি বিকল রয়েছে। তাই নিষেধ করার পরও অনেক সময় বাসের জানালার কাচ খুলে দিচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
আবদুল লতিফ নামে এক দর্শনার্থী জানান, আনন্দ ভ্রমণ কষ্টে পরিণত হয়েছে। এমন বাসে কখনও চড়া যায়! ভেতরে গরম। এসি নেই। টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভোগান্তি নিয়েছি। পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৩ সালে সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠার সময় আটটি এসি বাস ও দুটি জিপ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল; কিন্তু কয়েক বছর ধরেই বাসগুলোর অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত মেরামত করেই যানগুলো চালাতে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কে অন্তত ১৫টি বাসের জরুরি প্রয়োজন। যে ক’টি আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই বিকল হয়ে পড়ে থাকে। একদিকে মেরামত করা হয়, অন্যদিকে আবার বিকল হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ ছিল। সম্প্রতি কিছুটা মেরামত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাস কিংবা রাস্তার চেয়েও প্রয়োজনীয় লোকবলের সংকটের মধ্যে রয়েছে পার্কটি। মাত্র ৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে চলছে পার্কটি।
পার্কের ওই কর্মকর্তা জানান, কমপক্ষে ২৫০ জন লোকবলের প্রয়োজন। সেখানে আছে মাত্র ৭২ জন। এই সীমিতসংখ্যক লোক দিয়েই পার্কটি পরিচালিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে বেশির ভাগ সময়ই হিমশিম খেতে হয়।
প্রতি বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। চলতি বছরেও পার্কের ১৭টি ইভেন্ট ১২ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে।
পার্ক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর বাজার থেকে পার্ক পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার ৪০ ফুটের প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এলজিইডির মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাঘের বাজার থেকে পার্ক পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়কও প্রশস্ত করা হয়েছে ও সংস্কার করা হয়েছে। এতে পার্ক ২৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভেতরের রাস্তাগুলো বেহাল থাকলেও মূল রাস্তাগুলো পার্ক কর্তৃপক্ষ তৈরি করে দিয়েছে।