অনিয়মিত প্রশ্নে নিয়মিতদের পরীক্ষা, দুশ্চিন্তায় আলিমের ২২৬ শিক্ষার্থী

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ২১:০২ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ২১:০২
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের প্রশ্নে নিয়মিত ২২৬ পরীক্ষার্থীর আলিম পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ও চিন্তিত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা।
রোববার ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষায় উপজেলার ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত আলিমের ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইরেগুলার প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়।
রোববার সারাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আলিম পরীক্ষার একমাত্র কেন্দ্র ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার ২৩৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২২৬ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এতে অনিয়মিতদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
পরীক্ষায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অনিয়মিত (ইরেগুলার) শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র দিয়ে নিয়মিত (রেগুলার) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ায় চিন্তা হচ্ছে। পরীক্ষা নেওয়ার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এত বড় ভুল কীভাবে করল আমরা বুঝতে পারছি না। ফলাফল আসবে কিনা এনিয়েও খুব টেনশনে পড়েছি।
কয়েকজন অভিভাবক জানান, ভুল প্রশ্নে বাচ্চাদের পরীক্ষা নেওয়ায় আমরা খুব টেনশনে আছি। পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট আসবে কিনা। এর দায় কোনোভাবেই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এড়াতে পারবেন না। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করছি।
ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসার পরীক্ষার্থী মো. শাহিন মিয়া বলেন, রোববার প্রথম পরীক্ষা ছিল। আমরা প্রশ্নপত্র পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। প্রশ্নপত্রে যে ইরেগুলার লেখা ছিল তা খেয়াল করিনি। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নজরে আসলে শিক্ষকদের জানিয়েছি। তারা দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন।
মো. আব্দুল আজিজ নামের অন্য এক পরীক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা পরীক্ষার্থী তারা না হয় বিষয়টি খেয়াল করিনি, কিন্তু যারা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন তারা তো ভুল প্রশ্নপত্রে আমাদের পরীক্ষা নিয়েছেন।
মো. জুলফিকার রহমান নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, প্রথম দিনে ইংরেজি প্রথমপত্রের পরীক্ষা ছিল। যেগুলো পড়ে গেছি সেগুলো পরীক্ষায় আসেনি। ফলে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রশ্নপত্র দেখলাম ইরেগুলার প্রশ্নপত্র। এটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব থাকা ব্যক্তিরা জানান, পরীক্ষা শুরুর আগে ‘খ’ সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন অসাবধানতাবশত অনিয়মিত (ইরেগুলার) শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন বিষয়টি কারও নজরে আসেনি। পরীক্ষা শেষে বিষয়টি নজরে আসলে বোর্ডে যোগাযোগ করা হয়েছে।
ধুমাইটারী সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বরত কেন্দ্র সচিব ও মাদ্রাসার অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কেওয়াইএম আব্দুল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।
কেন্দ্রের নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. জাফর আহমেদ লস্কর বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন কেউ বিষয়টি আমাকে জানায়নি। যদি ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নিয়ে থাকে এ দায় আমার নয়, এর দায়-দায়িত্ব কেন্দ্র সচিবের।
এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মণ্ডল বলেন, ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় নেওয়া ঠিক করেনি। বোর্ড চাইলে এই প্রশ্নপত্রের আলোকে খাতা দেখার নির্দেশ দিতে পারে, তখন পরীক্ষার্থীদের ফলাফল আসবে।
এ ব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-নূর-এ আলম বলেন, অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া উচিত হয়নি। এর পুরো দায় কেন্দ্র সচিবের ওপর বর্তায়। কেন্দ্র সচিবের সঙ্গে এখনও দেখা হয়নি। ওনাকে ডেকেছি, উনি আসলে কেন এমন হয়েছে তা বিস্তারিত জানা যাবে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর কায়সার আহমেদ বলেন, বিষয়টি মারাত্মক ভুল। এর দায় কেন্দ্র সচিবের। ইউএনওকে আমি বলেছি পুরো বিষয় জেনে আমাকে বিস্তারিত জানাতে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
- বিষয় :
- গাইবান্ধা
- আলেম
- পরীক্ষা
- মাদ্রাসা