ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

খুলনা সিটির দায়িত্বে সিইও, প্যানেল মেয়রদের অসন্তোষ

খুলনা সিটির দায়িত্বে সিইও, প্যানেল মেয়রদের অসন্তোষ

হাসান হিমালয়, খুলনা

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

নির্বাচনে অংশ নিতে ১১ মে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র পদ ছাড়েন তালুকদার আবদুল খালেক। এরপর ১২ জুনের নির্বাচনে মেয়র পদে তিনিই বিজয়ী হন। শপথ নিলেও গেল পরিষদের মেয়াদ থাকায় দায়িত্ব গ্রহণে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবদুল খালেকের পদত্যাগের পর থেকে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লস্কর তাজুল ইসলাম। এ নিয়ে কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়রদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। নির্বাচিত তিনজন প্যানেল মেয়র থাকার পরও সিইওর দায়িত্ব পালনকে ‘গুরুতর আইন লঙ্ঘন’ বলছেন আইনজ্ঞরা।

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ২১-এর ২ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘পদত্যাগ, অপসারণ অথবা মৃত্যুজনিত কারণে মেয়রের পদ শূন্য হলে,শূন্য পদে নবনির্বাচিত মেয়র কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মেয়র প্যানেলের কোনো সদস্য মেয়রের সব দায়িত্ব পালন করবেন।’ এর আগে কেসিসির প্যানেল মেয়ররাই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার এ আইনের ব্যত্যয়করা হয়েছে।

জানতে চাইলে খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘সরকার সংবিধান সংশোধন করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতায় আসার পথ বন্ধ করেছে। আবার সরকারের আমলারা নির্বাচিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে অনির্বাচিতদের চেয়ারে বসাচ্ছেন। কেসিসিতে যেটিঘটেছে, গুরুতর আইনের লঙ্ঘন। জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই প্রতিবাদ জানানো উচিত।’

আবদুল খালেকের পদত্যাগের দিনই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, কেসিসির নির্বাচিত মেয়র দায়িত্বগ্রহণের আগ পর্যন্ত সব প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অর্পণ করা হলো। কেসিসির মেয়র প্যানেলের তিন সদস্য এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন। গত ৩ জুলাই তারা শপথ নেন। আইন অনুসারে,ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বভার প্যানেল মেয়রদের হাতে যাওয়ার কথা। কিন্তু সাড়ে তিন মাসেও তা হয়নি। কেসিসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালেও নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন তালুকদার আবদুল খালেক। ওই সময় মেয়র প্যানেলের সদস্যরা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন। নির্বাচনকালীন ২৫ দিন কেসিসির প্রশাসনিক প্রধান ছিলেন সিইও। নির্বাচনের পরে মেয়র প্যানেলের ১ নম্বর সদস্য আজমল আহমেদ তপনকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র করা হয়।সাড়ে তিন মাস দায়িত্ব পালনের পর তিনি নতুন মেয়র মনিরুজ্জামান মনির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

কাউন্সিলররা জানান, প্যানেল মেয়র পদসম্মানের। মেয়রের অবর্তমানে ‘ভারপ্রাপ্ত মেয়র’ হওয়ার সুযোগ থাকায় জ্যেষ্ঠ কাউন্সিলররা পদটিতে যেতে চেষ্টা করেন এবং মেয়র প্যানেল নির্বাচন নিয়েও তাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। বর্তমান পরিষদের ৯ কাউন্সিলর মেয়র প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেন। এর মধ্যে মেয়র প্যানেলের ১ নম্বর সদস্য হিসেবে ১৫নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম মুন্না, ২ নম্বর সদস্য হিসেবে ২৫ নম্বরওয়ার্ড কাউন্সিলর আলী আকবর টিপু ও ৩ নম্বর সদস্য হিসেবে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু নির্বাচিত হন। তবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না পেয়ে হতাশার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

আমিনুল ইসলাম মুন্না সমকালকে বলেন, ‘গত সাড়ে তিন মাসে অসংখ্য মানুষ, অসংখ্যবার প্রশ্নটি করেছেন। আমি বিব্রত। এটি আমলাদের ক্ষমতার দম্ভ। না হলে আইন থাকতেও প্রয়োগ কেন হচ্ছে না? আসলে রাজনীতিকদের হেয় করে আনন্দ পান আমলারা।’ আলী আকবর টিপু বলেন, ‘মন্ত্রণালয় অন্যায়ভাবে এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে।’

কেসিসির সিইও লস্কর তাজুল ইসলাম বর্তমানে ফিলিপাইনে আছেন। প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা কেসিসি সচিব আজমুল হক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এর বেশি কিছু বলার নেই।’

আরও পড়ুন

×