নির্বাচনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগের, আতঙ্কে মাঠছাড়া বিএনপি

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৪:০০
বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কার্যালয়। মাঠে নামতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব দলটির নেতাকর্মীরা। মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার বন্ধ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন তারা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মাঠে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
খাদ্যগুদাম, হাসপাতাল, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গত এক মাসে বকশীগঞ্জ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে পাঁচটি। মামলার বাদী পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় রয়েছেন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম প্রিন্স, যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল সাফী লিপন, সাবেক আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান ফিরোজ, শ্রমিক দলের সভাপতি কায়ছার আমীন, যুবদলের আহ্বায়ক বিপ্লব সওদাগর, সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান লাভলু, সভাপতি হাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, ছাত্রদলের আহ্বায়ক জুবাইদুল ইসলাম শামীম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শহিদুল হক দুলাল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শেখ রহমত আলী, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান প্রমুখ।
অনেক নেতাকর্মী একাধিক মামলায় আসামি হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২০ জন। উচ্চ আদালত থেকে অনেকে আগাম জামিন নিলেও ভয়ে এলাকায় ফেরেননি। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি থাকায় বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও রয়েছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, তার ছেলে ব্যারিস্টার শাহাদাৎ বিন জামান শোভন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাইয়ুম ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাহিদা আক্তার রীতা। একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা মোকাবিলাসহ দলীয় নেতাকর্মীর নিয়মিত খোঁজ-খবর ও সার্বিক সহযোগিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এমনটাই জানিয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মানিক সওদাগর।
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শহিদুল হক খান দুলালের ভাষ্য, গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতেই নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। টার্গেট করেই মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে। তবে মামলার ভয়ে ভীত নন তারা। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফখরুজ্জামান মতিন বলেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিকে চাপে রাখতে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীকে। সব বাধা উপেক্ষা করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চলবে।
তবে ক্ষমতাসীন দলের জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে মাঠে রয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে রয়েছেন। তাদের মধ্যে জোর লবিং করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই নেতাকর্মীরা কাজ করবেন বলে দাবি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন তালুকদার বাবুলের।
উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিরাজ বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের সুযোগ পাবে না বিএনপি-জামায়াত। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হচ্ছে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগমের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চাপে পড়ে দিশেহারা বিএনপি। আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। যে কারণে জনশূন্য হয়ে মাঠছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করেনি, করবেও না। যাদের গ্রেপ্তার এবং যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
- বিষয় :
- নির্বাচন
- গ্রেপ্তার আতঙ্ক