ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, অভিযোগ বিএনপির

বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ, অভিযোগ বিএনপির

বগুড়ার নন্দীগ্রামে শুক্রবার বিএনপি কার্যালয়ে লাঠিসোটা নিয়ে হামলায় অংশ নেওয়া কয়েকজন। ছবি: সমকাল

বগুড়া ব্যুরো

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৫:৪১

বগুড়ার নন্দীগ্রামে গত শুক্রবার বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগ নেতাকর্মীরা জড়িত বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির নেতাদের দাবি, ভাঙচুরে অংশ নেওয়া মুখোশধারীরা ছিল বহিরাগত। তারা বগুড়া শহর থেকে এক যুবলীগ নেতার নির্দেশে সেখানে উপস্থিত ছিল। মুখোশধারীদের একজন গুলি ছুড়লে হট্টগোল শুরু হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

উপজেলা বিএনপির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, পৌর কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি সুমন হোসেন ও পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল আহাদ লাঠি হাতে সামনে থেকে এই হামলার নেতৃত্ব দেন। লাঠি হাতে তাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির শীর্ষ নেতারাও এ সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন। কমপক্ষে ৩৫ জন বিএনপি অফিসে হামলায় অংশ নেয়। যাদের হাতে লাঠি দেখা গেছে, তাদের মধ্যে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক আনন্দ কুমার, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, শ্রম সম্পাদক সানোয়ার হোসেন মিলন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিরুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ আশরাফ মামুন, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, পৌর কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি সুমন হোসেন, প্রচার সম্পাদক আব্দুল আহাদ, শ্রমিক লীগ নেতা এনামুল হক ও আরাফাত হোসেন। বহিরাগতদের কয়েকজনের হাতে লাঠি ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এদের অনেকেই ছিল মুখোশধারী।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরাই তাদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলা করেছে। লাঠি হাতে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন পৌর কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি সুমন হোসেন ও পৌর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুল আহাদ। তারা বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য মিছিল নিয়ে গেলে বিএনপির ক্যাডাররা আমাদের ওপর হামলা করে।

এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ফিলিং স্টেশন এলাকায় তাদের কার্যালয়ে জড়ো হয়। তবে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় আগে থেকেই পুলিশ অবস্থান নিয়ে ছিল। স্থানীয়রা জানায়, বিকেল সোয়া ৩টার দিকে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড বঙ্গবন্ধু চত্বরে আওয়ামী লীগের ৮০-৯০ জন নেতাকর্মী জমায়েত হয়। এর মধ্যে বহিরাগত ছিল অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা ও সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল মহাসড়ক হয়ে বিএনপি অফিসের দিকে যায়। মিছিলটি বিএনপি কার্যালয়ের কাছাকাছি গেলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা হাতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপি কার্যালয় চত্বরে প্রবেশ করে। তারা বিএনপির সভাস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করে এবং ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে এবং দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীকে মারধর করা হয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পাল্টা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে উভয় দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে উত্তেজিত পরিস্থিতি শান্ত করে বিএনপি নেতাকর্মীকে তাদের অফিস থেকে নিরাপদে যেতে সহায়তা করে পুলিশ। এ সময় একটি ফাঁকা গুলির শব্দ হয়। কে বা কারা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেলও নিক্ষেপ করে, যদিও সেটি বিস্ফোরিত হয়নি।

উপজেলা বিএনপি সভাপতি আলাউদ্দিন সরকার দাবি করেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালনের জন্য পুলিশের কাছ থেকে আমরা অনুমতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীকে মারধর ও চেয়ার ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বিএনপির পাঁচ-ছয়জন আহত হয়। আমরা তাদের প্রতিহত করতে পারতাম কিন্তু তা করিনি।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন রানা বলেন, আওয়ামী লীগের মিছিলটি মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশে যাওয়ার পথে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা করে। এতে আওয়ামী লীগের একজন গুলিতে আহত হয়। এ ছাড়া আরও দু’জন হামলায় আহত হয়েছে। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের মিছিলে বহিরাগত কেউ ছিল না। যারা ছিল সবাই দলের স্থানীয় কর্মী।

বগুড়ার বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি মোশারফ হোসেন বলেন, কারা লাঠি হাতে হামলা করেছে তা জনগণ দেখেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ইঙ্গিতেই বহিরাগত ও তাদের দলীয় ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে বিএনপি অফিসে হামলা করেছে।
এদিকে এই সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। পুলিশ কাউকে আটকও করেনি। নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুক্রবার আওয়ামী লীগের একটি মিছিল হঠাৎ বিএনপির অফিস চত্বরে প্রবেশ করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি শান্ত করে দু’দলের নেতাকর্মীকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কারা বিএনপি অফিসে হামলা করে চেয়ার ভাঙচুর করেছে, তা আমার জানা নেই। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি বা কোনো পক্ষ মামলাও করেনি।’

আরও পড়ুন

×