২০২২ সালে এসেছে ৮৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা
রাঙ্গুনিয়ায় উৎপাদিত সুতা যাচ্ছে ১২ দেশে

রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী জুট মিলে সুতা উৎপাদনে ব্যস্ত কর্মীরা - সমকাল
মাসুদ নাসির, রাঙ্গুনিয়া
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৭:৪১ | আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৭:৪১
রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী জুট মিলে পাট থেকে সুতা উৎপাদন করে বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০২২ সালে পাট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮৫ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। ভবিষ্যতে পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদন করে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড। রাষ্ট্রায়ত্ব বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের অধীন ২৬টি মিলের মধ্যে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টির মধ্যে অন্যতম প্রধান পাটকল ছিল এটি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে লিজ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। বর্তমানে ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন এক হাজারের বেশি শ্রমিক। দুটি শিফটে দৈনিক ৩০ টনেরও বেশি পাট থেকে সুতা উৎপাদিত হয় কারখানায়, যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুর্কি, ভিয়েতনামসহ ১২টি দেশে রপ্তানি হয়। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বেসরকারি খাতে পরিচালিত এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. ফখরুদ্দিন বলেন, ‘কর্ণফুলী জুট মিল দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প প্রতিষ্ঠান। আমরা লিজ নেওয়ার আগে এটি দুই বছর বন্ধ ছিল। এর আগে এ কারখানা থেকে মাত্র ৬ টন সুতা উৎপাদিত হতো। ইউনিটেক্স গ্রুপ দায়িত্ব নিয়ে বর্তমানে এই মিলের উৎপাদন ৩০ টনে উন্নীত করেছে। ভবিষ্যতে দৈনিক ১০০ টন সুতা উৎপাদন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ৩০ টন হিসেবে বছরে কারখানার উৎপাদন সাড়ে ১০ হাজার টনেরও বেশি। গত বছর আমরা ৮৫ লাখ ৫০ হাজার ইউএস ডলার তথা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ কোটি টাকা আয় করেছি।’
ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের থেকে সরাসরি পাট সংগ্রহ করি, এতে কৃষকরা পাটের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। আমাদের কারখানায় সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আরও বেশি পরিমাণ মানুষ উপকৃত হবেন। সোনালি আঁশের যে ঐতিহ্য রয়েছে, সেটা ফিরিয়ে আনতেই আমরা মূলত কাজ করে যাচ্ছি।’
সরেজমিন দেখা যায়, ‘কারখানায় সুতা তৈরির জন্য চলছে বিভিন্ন ধরনের কাজ। ট্রাকে করে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাট আনা হচ্ছে। কিছু শ্রমিক সেই পাট নামাচ্ছেন, আবার কেউ পাটগুলোকে গ্রেডভিত্তিক ভাগ করে পরিমাপ অনুযায়ী কেটে নিচ্ছেন। সেখান থেকে পাট ভ্যানে করে মূল কারখানায় প্রবেশ করানো হচ্ছে। তারপর নানা প্রক্রিয়া শেষে সুতা তৈরির কাজে ব্যস্ত দেখা গেছে সহস্রাধিক নারী-পুরুষকে।
শ্রমিক জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৭) বলেন, ‘একসময় বেকার ছিলাম, সংসারে চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। জুটমিল নতুন করে চালু হওয়ায় চাকরির আয়ে সংসার চলছে। খুব ভালো আছি।’
ইউনিটেক্স জুট ইন্ড্রাট্রিজ লিমিটেডের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে পাটকে আমরা প্রথমত বিভিন্ন গ্রেডে ভাগ করি। সুতার পণ্য তৈরি করার জন্য পাটকে গ্রেডভিত্তিক ভাগ করা হয় এবং সেই অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুতাগুলো তৈরি করে মিল থেকেই প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।’
ইউনিটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক (লিগ্যাল এন্ড এষ্টেট) গোলাম মাওলা বলেন, ‘শ্রমিকদের জন্য মিলে রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত মানসম্মত আবসেনর ব্যবস্থা রয়েছে, রয়েছে শ্রমিক কলোনি ও স্টাফ কোয়ার্টার। কারখানার ভেতর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন শৌচাগার, মশা নিধনে নিয়মিত পগার মেশিনের সাহায্যে স্প্রে কার্যক্রমসহ কর্ম উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।’
জুটমিলের প্রশাসন ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসলাম হোসেন বলেন, “সরকারকে মাসিক নির্ধারিত হারে ভাড়া দিয়ে এই কারখানার হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো কারখানার স্থাপনাগুলো ৫০/৬০ বছরের পুরোনো হওয়ায় ছাদ নষ্ট হয়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে, কর্ণফুলী পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এতে শ্রমিক কলোনি, সীমানাপ্রাচীর এমনকি বহুতল বিশিষ্ট অফিসার্স ভবন ভাঙনের কবলে পড়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’
- বিষয় :
- রাঙ্গুনিয়া
- সুতা
- সুতা উৎপাদন
- সুতা রপ্তানি