ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

সারাবছরই রোগী থাকে ওয়ার্ডের মেঝে-বারান্দায়

সারাবছরই রোগী থাকে ওয়ার্ডের মেঝে-বারান্দায়

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে জায়গা নেই। বারান্দায় মাদুর পেতে চিকিৎসা নেন রোগীরা। ছবি: সমকাল

সৌরভ হাবিব, রাজশাহী

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ২০০টি। অথচ উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় তিন হাজার। বর্তমানে সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। ফলে শয্যা সংকটে রোগী ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। জায়গা না পেয়ে সারা বছরই ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা এমনকি চলাচলের রাস্তাতেও রোগীদের রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই রাজশাহীর নাগরিকরা রামেক হাসপাতালের শয্যা বাড়ানোর দাবি করে এলেও তা তেমন কাজে আসেনি। ফলে রোগের ধকলের পাশাপাশি গ্রীষ্মে গরম আর শীতে ঠাণ্ডায় কষ্ট পেতে হয় মেঝে ও বারান্দায় আশ্রয় পাওয়া রোগী এবং তাদের স্বজনদের। সেইসঙ্গে মশা আর পোড়ামাকড়ের উৎপাত তো আছেই।

গত রবি ও গতকাল বুধবার হাসপাতালের ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ড, ১৩, ১৪ মেডিসিন ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, রোগী ও স্বজনদের চাপে তিল ধারনের জায়গা নেই। শিশু ওয়ার্ডের প্রতিটি বেডেই একাধিক শিশু রাখা হয়েছে। মেঝেতেও এক বিছানায় চিকিৎসা চলছে একাধিক শিশুর। অসুস্থ এই শিশুদের অধিকাংশই জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালের মেডিসিন, গাইনি, অর্থপেডিক্স ওয়ার্ডগুলোতেও রোগীর তীব্র চাপ। এসব ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দাতেও রোগী ভর্তি। এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে যাওয়ার রাস্তাতেও বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে।

মেডিসিন ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে যাওয়ার রাস্তায় বিছানা পেতে শুয়েছিলেন রোগী শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, মা ও বোনকে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছি। বেড পাইনি, তাই ওয়ার্ডের রাস্তায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানে কোনো ফ্যান নেই, তীব্র গরম। মশারি নেই, কয়েলেও মশা যাচ্ছে না। চারদিকে ফাঁকা হওয়ায় ধুলোবালিসহ ময়লা পড়ছে। এরই মধ্যে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

একই জায়গায় শুয়েছিলেন গোদাগাড়ীর আদারপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সুন্দরী। তিনি বলেন, ওয়ার্ডে জায়গা নেই। বারান্দাতেও জায়গা নেই। রাস্তায় একটু জায়গা পেয়ে এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছি। এখানে ডাক্তাররা আসেন কম।

তিন বছরের অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি গোদাগাড়ীর নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছিলাম। ওয়ার্ডের রাস্তায় নোংরার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এখানে কেউ পরিষ্কারও করে না। নিজেকেই পরিষ্কার করতে হচ্ছে। ফ্যান নেই তাই বাচ্চা গরমে খুব কষ্ট পাচ্ছে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, অনেক বছর ধরেই রামেক হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর দাবি করছি। তবে হাসপাতালের পরিধি বাড়ানোর কোনো গতি দেখতে পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মেদ বলেন, ‘প্রতিদিন এখানে ২৮শ থেকে তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি থাকেন। হাসপাতাল তিন হাজার শয্যায় উন্নীত করতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রণালয়ে। তবে দুই হাজার শয্যা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ-সংক্রান্ত একটি রেজ্যুলেশনও হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলেই শয্যা বাড়ানোর কাজ শুরু হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে ওষুধ ও খাবার ১২শ বেডের জন্যই বরাদ্দ হয়। বিকল্প ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ভর্তি রোগীদের ওষুধ ও খাবার দিতে হচ্ছে। বেড বাড়লে চিকিৎসক, নার্সও বাড়ার সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে। বর্তমানে হাসপাতালের পদের তুলনায় ৩০ জন চিকিৎসক এবং ৫ জন নার্স কম রয়েছে।

আরও পড়ুন

×