বাড়ির ছাদে প্রবাসীর লাশ: চাটখিলে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯ | ০৮:৫৯
নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার সানোখালী গ্রামে নিজ বাড়ির ছাদে প্রবাসী গোফরান মিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। নিহতের বড় ছেলে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহজামাল মানিকমঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ অভিযোগ দায়ের করেন।
এতে সানোখালী গ্রামের মৃত হাবিব উল্যাহর ছেলে আবুল হাসেমকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা রাখা হয়েছে ৪-৫ জন। অপর আসামিরা হচ্ছে- সানোখালী গ্রামের রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবাল, মো. জনি, জিয়াউল করিম রিপন, দিদার হোসেন, নূপুর বেগম, টুনি বেগম ও মধ্য বদলকোট গ্রামের ঠাকুরবাড়ির কেরাম আলীর ছেলে মাসুদ আলম।
এ ঘটনায় নোয়াখালী পিবিআই ও চাটখিল থানা পুলিশ একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ময়নাতদন্ত ও জানাজা শেষে গতকাল বাদ আসর নিহতের ছেলে নুর আলমের ব্যক্তিগত কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। গত ১৬ অক্টোবর সকালে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গোফরানের দ্বিতল বাসভবনের ছাদ থেকে তার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। থানায় দায়ের করা অভিযোগ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গোফরান সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে আসছেন। তিনি গত ১০ আগস্ট ঢাকার রামপুরার বনশ্রীর বাড়িতে আসেন।
নিহতের ছেলে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মানিক, নুর আলম, মেয়ে শোভা ও বিজলি জানান, তাদের বাবার ঢাকা ও নোয়াখালীর চাটখিলে প্রায় শতকোটি টাকার দালানবাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে। তাদের অনুপস্থিতিতে স্বজন আবুল হাসেম, রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবাল, মো. জনি, জিয়াউল করিম রিপন, দিদার হোসেন, মাসুদ আলমকে গোফরান মিয়ার ঢাকা ও চাটখিলের সম্পত্তি-বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভোগদখলকারীরা লোভে পড়ে সম্পূর্ণ সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা শুরু করে।
২০১৮ সালে গোফরান মিয়া সম্পত্তি ও বাড়ির আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ চাইলে আসামিরা তাকে হিসাব না দিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। এ নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকে মীমাংসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সহায়-সম্পত্তির হিসাব চাওয়ায় গত বছর ২ মে গোফরান মিয়াকে অমানবিকভাবে মারধর করে আসামিরা। ওই ঘটনায় গত ১২ মে আসামিদের বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা জজ আদালতে গোফরান মিয়া মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে আবুল হাসেম, রেজাউল করিম রিংকু, জহির ইকবালসহ অন্যরা তাকে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকিও দিয়েছিল। একপর্যায়ে গোফরান মিয়ার সহায় সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ১৬ অক্টোবর গোফরান মিয়া চাটখিলের সানোখালী গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরদিন সকালে তিনি সকালের নাশতা সেরে নিজ বাড়ির দ্বিতল ভবনের ছাদে যান। পূর্ববিরোধ ও মামলার জের ধরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গোফরান মিয়াকে হত্যা করে।
এ ঘটনার ১ ঘণ্টা পর বাড়ির পাহারাদার ও নিহতের স্বজন জহির ইকবাল চাটখিল থানা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সোমবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নিহতের ছেলেমেয়েরা দেশে এসে থানায় অভিযোগ করেন।
গোফরানের মেয়ে রুবিনা ইসলাম বলেন, তাদের শতকোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্যই বাবাকে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তারা খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছেন। ঘটনার পর থেকে অনেক আসামি এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছে।
স্থানীয় নোয়াখলা ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহীম খলিল সোহাগ বলেন, আলামত দেখে মনে হচ্ছে এটি হত্যাকাণ্ড। বাকিটা পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
হত্যাকাণ্ডের পর সোম ও মঙ্গলবার পিবিআই নোয়াখালীর দুটি টিম পৃথকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। পিবিআই পরিদর্শক তৌহিদুর রহমান জানান, যেহেতু বিষয়টি তদন্তাধীন সেহেতু এ ব্যাপারে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। এ মামলার তদন্তভার পিবিআই পেলে অধিকতর তদন্ত করা হবে।
চাটখিল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি হত্যা, না অন্যকিছু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে প্রবাসী গোফরানকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে।
- বিষয় :
- প্রবাসীর লাশ
- হত্যার অভিযোগ
- চাটখিল