ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম খান ফের তুলছেন বালু

‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম খান ফের তুলছেন বালু

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০

চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ‘বালুখেকো’ হিসেবে পরিচিত সেলিম খান আবারও বেআইনিভাবে বালু উত্তোলনে নেমেছেন। চাঁদপুর সদরসংলগ্ন মেঘনা নদীর একাধিক স্থান থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে তাঁর দলবল। গত তিন মাস ধরে রাতের অন্ধকারে তিনি এ কাজ করছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুর জেলায় কোনো বালুমহাল নেই। ফলে সেলিম খানের বালু উত্তোলনে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেই।

জেলার নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, সেলিম খানের লোকজন রাত ১১টার পর থেকে মেঘনায় তিনটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনের কাজ চলে রাত ৪-৫টা পর্যন্ত। রাত পোহানোর আগেই ড্রেজারগুলো গোপন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের পশ্চিম পাশে অবৈধভাবে উত্তোলিত বালু মজুত রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া চাঁদপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব-দক্ষিণ দিকে ঢালীর ঘাটেও বালু সংরক্ষণ করা হয়। এখানে সেলিম খানের সহোদর টেলু খানের বালু বিক্রির জায়গা রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন অবাধে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এই বালু কোথা থেকে আসছে– স্থানীয় প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না।

সেলিম খান সম্প্রতি দুদকের মামলায় জেল খেটে বের হওয়ার পর কিছুদিন চুপচাপ ছিলেন। এর পর আবারও বালু উত্তোলনের কাজ শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন চাঁদপুরসংলগ্ন পদ্মা ও মেঘনার ৭০ কিলোমিটার এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিপুল অর্থকড়ি কামিয়েছেন বহিষ্কৃত এই আওয়ামী লীগ নেতা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, মেঘনা নদীতে কোনো ধরনের বালুমহাল নেই। তাই এই নদী থেকে বালু উত্তোলন অবৈধ। বিগত দিনে অভিযান চালিয়ে সেলিম খানের ৩০০ ড্রেজার জব্দ করা হয়েছিল। আবারও তাঁর বালু উত্তোলনের কোনো খবর পাওয়া গেলে তারা অভিযান পরিচালনা করবেন।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সমকালকে বলেন, চাঁদপুর জেলায় কোনো বালুমহাল নেই। তাই কাউকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী এই অনুমতি দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। মাসখানেক আগে গভীর রাতে মেঘনা থেকে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে তা বন্ধ করার জন্য কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে  জানানো হয়েছিল।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, সেলিম খান প্রতিরাতে গোপনে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন। স্থানীয় প্রশাসনসহ সবাইকে ম্যানেজ করে এ কাজ করছেন বলে তিনি বলে বেড়াচ্ছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক সমকালকে বলেন, সেলিম খান সিন্ডিকেট যেভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছে, এটা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে চাঁদপুর শহর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এখনই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার।

জানা গেছে, গত বছরের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশন  সেলিম খানের বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে।

আরও পড়ুন

×