ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

এসিল্যান্ডের ঘুষ নেওয়ার নির্দেশের অডিও ভাইরাল

এসিল্যান্ডের ঘুষ নেওয়ার নির্দেশের অডিও ভাইরাল

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান

পিরোজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪:১৮ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪:১৮

“প্রতিটি নাম জারির জন্য আমাকে ৪ হাজার টাকা করে দেবেন। আপনারা নেবেন ২ হাজার টাকা। মোট ছয় হাজার টাকা নেবেন। এর ওপরে যেন না নেওয়া হয়। ‘খ’ তপশিলের নাম জারির প্রতিটি কেসের জন্য আমাকে ১০ হাজার টাকা করে দেবেন। আর আপনারা ৫ হাজার টাকা, মোট ১৫ হাজার টাকা করে নেবেন।”

ভূমির নাম জারি (মিউটেশন) করাতে এভাবে ঘুষের টাকা নিতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের (তহশিলদার) নির্দেশনা দিয়েছেন নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান। তার একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। সম্প্রতি কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

অডিওতে শোনা যায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের বলছেন, ‘আপনারা যে পার কেসে ডিলিংস করেন, তা এনশিওর করার ওয়ে আছে? খোলামেলা বলেন, আপনারা কী চচ্ছেন?’

এ সময় মাটিভাংগা ইউনিয়নের কর্মকর্তা মো. সুজন বলেন, ‘দুই একরের বেশি জমি হলে আমরা কত নেব?’ শ্রীরামকাঠীর কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র বলেন, ‘এটা স্যারের উপর নির্ভর করে। যেভাবে বলবেন, সেভাবে নেব। সাতকাছিমার শাহজাহান কবির বলেন, ‘সব কেসে সমান হওয়া উচিত। ৫ হাজার টাকা ছিল। আপনি বললে চার হাজার টাকায় নামাইয়া আনতে পারি।’

এ সময় মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ধরেন, আমি ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিলাম, আপনারা কত ডিল করবেন?’ পরে মাটিভাংগার সুজন বলেন, ‘যদি ৪ হাজার টাকা দেওয়া যায়, তাহলে ৫ হাজার ৫০০ টাকা হলে হয়, আমরা হাজার টাকার বেশি নেব না।’ সাতকাছিমার শাহজাহান কবির বলেন, ‘মোট ৬ হাজার টাকা হলে হয়।’

তখন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘এ অর্থবছরের জন্য প্রতিটি নাম জারিতে আমাকে ৪ হাজার টাকা দেবেন। আপনারা ২ হাজার করে মোট ৬ হাজার টাকা নেবেন।’ এর পর তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার কয় টাকা চান, বলেন। আমাকে ৪ হাজার দেন, আপনারা ১ হাজার ৫০০ টাকা নেন।’ তখন সেখমাটিয়ার কর্মকর্তা হাসন হাওলাদার, দেউলবাড়ী দোবরার মিজানুর রহমান ও দীর্ঘার এজেডএম জাকির হোসেন বলেন, ‘স্যার, ৬ হাজার করা হোক।’

পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “৬ হাজার টাকার ওপরে যেন না নেওয়া হয়। ‘খ’ তপশিলের জন্য ১০ হাজার আর আপনারা ৫ হাজার টাকা করে নেবেন।”

জানা গেছে, নাম জারি করতে সরকারি ফি এক হাজার ১৭০ টাকা। অথচ ৬ হাজার টাকা করে নেওয়ার জন্য অধীনস্তদের নির্দেশনা দিয়েছেন নাজিরপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তবে বিষয়টি অস্বীকার করছেন সভায় উপস্থিত থাকা ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা।

সাতকাছিমার কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, ‘স্যারের সঙ্গে প্রতি মাসেই সভা হয়। টাকা নেওয়ার নির্দেশনার কথা স্মরণ পড়ছে না।’ অডিওতে তাঁর কণ্ঠ শোনা যাওয়ার কথা জানালে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মনে করতে পারছি না।’ শ্রীরামকাঠীর কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র বলেন, ‘আমি এদিন উপস্থিত ছিলাম না।’

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘খাসজমি উদ্ধার নিয়ে কাজ করায় কিছু মহলের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তারাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। অডিওটি কীভাবে হলো, জানি না।’ কণ্ঠ তাঁর কিনা জানতে চাইলে, তিনি এড়িয়ে গিয়ে জানান, পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আছেন। কর্মস্থলে এসে খোঁজ নিয়ে জানাবেন।

নাজিরপুরের ইউএনও সঞ্জীব কুমার দাস জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর অডিওর বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) শোকজ করেছেন।

পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. সেলিম হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (আজ) থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে। অল্প সময়ে তদন্ত কাজ শেষ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×