হাসপাতালে পানি নেই ১০ দিন, সেবাদাতা ও রোগীর ভোগান্তি

হাসপাতালে পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসক ও রোগীরা
বেলাব (নরসিংদী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৭:৩৫ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৭:৩৫
বিকল পানির পাম্প। তাই ১০ দিন ধরে হাসপাতালে পানি সরবরাহ বন্ধ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও সেখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দেড় সপ্তাহেও পানির ব্যবস্থা না করায় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন রোগীরা। এই অবস্থা বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালটির একমাত্র পানির পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণেই এ সমস্যা। তারা জানান, শুধু রোগীরাই যে পানির অভাবে আছে, তা নয়। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মচারী ও আবাসিক কর্মকর্তারাও পানি সংকটে ভুগছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান করা হবে বলে আশা তাদের।
বেলাব ও পাশের কুলিয়ারচর উপজেলার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। আগে অনেক সমস্যা ছিল এ হাসপাতালে। এক্সরে, ইসিজি, ওটি, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট ছিল। গত কয়েক বছরে সেসব সমস্যার সমাধান হয়েছে। হঠাৎ ১০ দিন আগে পানির পাম্পটি নষ্ট হয়ে গেছে। সেটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় নরসিংদীতে। কিন্তু ১০ দিন আগে নষ্ট পানির পাম্প মেরামতের জন্য পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত মেরামত করা হয়নি। গত ১০ দিন ধরে হাসপাতালে পানি না থাকায় বিপাকে পড়েছেন চিকিৎসক ও রোগীরা।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে, পুরো হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র পাঁচজন। হাসপাতালটির এক পাশে পুরাতন ভবনে পুরুষ ওয়ার্ডের সব শয্যা ফাঁকা। নারী ওয়ার্ডেরও প্রায় একই অবস্থা। এখানে মাত্র একজন নারী ভর্তি রয়েছেন।
হাসপাতালে আরেক পাশে নতুন ভবনের পুরুষ ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি মাত্র চারজন। তিনটি কেবিনেও কোনো রোগী নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতালে এতদিন সব শয্যায় রোগী ভর্তি থাকত। অথচ ১০ দিন ধরে পানির অভাবে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১০-এরও কম।
ওয়ার্ড ও কেবিনের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড এবং কেবিনের ট্যাপ থেকে পানি পড়ছে না। কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালে পানি না থাকায় তারা বাইরে থেকে পানি আনেন। যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা একটু ভালো, তারা পানি কিনে আনেন। প্রাকৃতিক কাজে টয়লেটে যেতে পারেন না পানির অভাবে। শৌচাগারে উৎকট গন্ধ। এমন অবস্থায় চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পথে কথা হয় নাপিতেরচর গ্রামের রত্না রানী ও উজিলাব গ্রামের অলফত আলীর সঙ্গে। তারা আক্ষেপ করে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, কিন্তু পানির এত অভাব, যা বলার ভাষা নেই। টয়লেট করতে গেলেও নিচে নেমে অনেক দূর গিয়ে পানি আনতে হয়। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
হাসপাতালে ভর্তি মানিক মিয়ার ভাষ্য, গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। ভর্তি হওয়ার পর এ পর্যন্ত পানি পাননি। চিকিৎসাও তেমন পাচ্ছেন না। বাথরুমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
কথা হয় হাসপাতালের দোতলায় দায়িত্বে থাকা নাসিমা সরকার নামে সিনিয়র স্টাফ নার্সের সঙ্গে। তিনি জানান, পানির পাম্প এক সপ্তাহ ধরে নষ্ট। রোগী যে ভর্তি হচ্ছে না, তা নয়। তবে পানির অভাবে তাদের সমস্যা হচ্ছে।
বিষয়টি জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়দা তানজিনা আফরিনের সঙ্গে। তাঁকে না পেয়ে কথা হয় হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা বেনজির দুরদানার সঙ্গে। তিনি জানান, পানির পাম্পটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে। পানির পাম্প ঠিক করতে দেওয়া হয়েছে। এটি মেরামত হলেই আর পানির সংকট থাকবে না।
- বিষয় :
- পানি
- হাসপাতাল
- রোগী
- বেলাব
- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের