ভয়ংকর প্রতারক পরিবারটির ফাঁদে পড়ে বিপদে অনেকে

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা। ছবি: সমকাল
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩:২১ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩:২৪
কৌশলে ব্যাংক চেক হাতিয়ে নেওয়ার পর ফাঁদে ফেলে টাকা আদায়। টাকা আদায় করতে না পারলে মামলা দিয়ে হয়রানি। এভাবেই একটি প্রতারক পরিবারের খপ্পরে পড়ে বিপদে পড়েছেন অনেকে। এ কাজে ‘অনন্যা সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি সমবায় সমিতি ব্যবহার করা হয়েছে।
চক্রটির মূল হোতা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দেবাসুর গ্রামের মনসুর মোল্লার ছেলে রিপন মোল্লা ওরফে লিটন। চক্রের অন্য সদস্য হলেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার পাশাপাশি জাল নোটের কারবার ও স্বর্ণের দোকানে চুরির অভিযোগও রয়েছে। প্রতারণার অভিযোগে পরিবারটির বিরুদ্ধে ১২টি মামলা চলছে।
শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জ রিপোর্টার্স ফোরামের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন কয়েকজন ভুক্তভোগী। রিপন মোল্লার নিজেরই দাবি, অন্তত ১২টি মামলায় জামিনে রয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রতারক পরিবারটির জামাতা মো. রুবেল শেখ বলেন, তিনি গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। রিপন মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী কলি বেগম গোপালগঞ্জ শহরের বেদগ্রাম এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২২ সালের ১০ জুন তাদের একমাত্র মেয়ে অনন্যা আফরিনকে তাঁর সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পর বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায় করতে থাকে পরিবারটি। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন, ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল গোপালগঞ্জ সদরের উলপুর গ্রামের জিন্নাত আলী শেখের ছেলে মোরশেদ শেখের সঙ্গে অনন্যার প্রথম বিয়ে হয়। তিনি প্রথম স্বামীর কাছ থেকে কৌশলে ব্যাংকের চেক বই আদায় করেন। এনআই অ্যাক্টে মামলা দিয়ে মোরশেদ শেখের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। অনন্যা তাঁর সই করা চেক বইও চুরি করেছেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর এনআই অ্যাক্টে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে তাঁর বিরুদ্ধে শ্বশুর রিপন মোল্লা মামলা করেন। মেয়েকে আবার অন্যত্র বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা কামানোই পরিবারটির প্রতারণার কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে তারা ঘন ঘন বাসা বদলেছেন।
ভুক্তভোগীদের আরও অভিযোগ, রিপন মোল্লা ‘অনন্যা সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের সমিতির মাধ্যমে ১৫০ ব্যক্তিকে ঋণ দিয়েছেন। ঋণ বিতরণের সময় ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে টাকার পরিমাণ উল্লেখ ছাড়াই স্বাক্ষর করা চেকের পাতা নেন। চেকগুলো ব্যাংক থেকে ডিজঅনার করে প্রায় ১০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পুলিশ গত ২ মে রাতে শহরের বিসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ হাজার ২০০ টাকার জাল নোটসহ রিপন মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর রিপন মোল্লা তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের স্বর্ণপট্টির সাধন বাকচীর স্বর্ণের দোকানে যান। বাসায় দেখানোর কথা বলে স্ত্রী ও মেয়ে ৭ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যান। তখন রিপন মোল্লা স্বর্ণের দোকানেই বসা ছিলেন। কিছু সময় পর ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে তিনিও পালিয়ে যান। এ ঘটনায় সাধন বাকচী মামলা করেন।
ভুক্তভোগী বীরেন বিশ্বাস অভিযোগ করেন, তিনি একটি স্বর্ণের দোকনের কর্মচারী। তিনি রিপন মোল্লার সমবায় সমিতি থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সেই টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু তখন ভুল করে ব্যাংকের চেক ফেরত আনেননি। পরে ওই চেক দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা আদায়ের মামলা করা হয়েছে।
আরেক ঋণগ্রহীতা তানিয়া বেগমের অভিযোগ, তিনি ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। রিপন মোল্লা তাঁর কাছে ৭ হাজার টাকা পাবেন। কিন্তু তিনি সাড়ে ১৭ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। তাঁর পরিচিত আরও ১৩ জনকে এমন নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সবাইকে মামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
জাল নোট, স্বর্ণ চুরিসহ ১২টি মামলায় জামিনে রয়েছেন জানিয়ে রিপন মোল্লা দাবি করেন, তাঁর জামাতা রুবেল শেখ বাড়ি নির্মাণ ও চাকরি পেতে তাঁর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। জামাতা তাঁর মেয়েকে কাছে রাখেন না। তাই টাকা আদায়ের জন্য মামলা দিয়েছেন।
মেয়েকে একাধিক বিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে রিপন মোল্লার আরও দাবি, অন্যদের সঙ্গে যে ঝামেলা ছিল, তা মিটিয়ে ফেলেছেন। সমিতি পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাই এ টাকা আদায় করতে বিভিন্ন লোককে উকিল নোটিশ দিয়েছেন। কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।