স্কুলে যাওয়ার পথে ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

রিয়া
নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ ও ভালুকা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় এক প্রবাসীর সঙ্গে রাখিয়া সুলতানা রিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন বিদেশে চলে যায় তার স্বামী। এরপর আর বেশি দিন শ্বশুরবাড়িতে টিকতে পারেনি রিয়া। শাশুড়ির নির্যাতন সইতে না পেরে সে মা-বাবার কাছে চলে যায়। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে। সেই স্কুলে যাওয়ার পথেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে মুখোশধারী এক যুবক।
গতকাল সোমবার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বাটাজোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের বাটাজোড় দক্ষিণপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদের মেয়ে রিয়া। সে বাটাজোড় বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। স্বজনের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হত্যা করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে সৌদি প্রবাসী রিপন মিয়ার সঙ্গে রিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন বিদেশে চলে যান রিপন। নানা বিষয় নিয়ে শাশুড়ি খতেমন নেছার সঙ্গে প্রায়ই তার ঝগড়া হতো। রিয়াকে গালমন্দ ও নির্যাতন করতেন তিনি। এক দিন কয়েলের আগুন দিয়ে তার হাতও পুড়িয়ে দিয়েছেন খতেমন। নির্যাতন সইতে না পেরে ছয় মাস আগে মা-বাবার কাছে ফিরে যায় রিয়া। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে অনেকবার ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু নির্যাতনের ভয়ে আর যায়নি রিয়া। সে সিদ্ধান্ত নেয়, আবার স্কুলে যাবে; পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হবে। তার মা-বাবাও রিপনের পরিবারকে জানিয়ে দেন, রিয়াকে আর তাদের বাড়ি পাঠাবেন না।
গতকাল দুপুরে রিয়া স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হলে মুখোশধারী এক যুবক পিছু নেয়। বাটাজোড় এলাকায় পৌঁছাতেই পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে রিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে সে। চিৎকার দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলে ওই যুবক তার ঘাড়, পিঠসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে ধানক্ষেতে ফেলে যায়। রিয়াকে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রিয়ার মা মাজেদা খাতুন বলেন, ‘না বুঝে মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিলাম। আমার মেয়ে সেখানে যেতে চাইত না। পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়েছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি যেতে না চাওয়ায় আমার মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ওরা। আমি এর বিচার চাই।’
রিয়ার ভগ্নিপতি মনির খাঁ বলেন, ‘রিয়াকে অনেকটা জোর করেই অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরে নির্যাতন সইতে না পেরে সে চলে আসে। ছয় মাস আগে এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। মেয়েটাকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাঁচতে দিল না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রাকিব হাসান জানান, হাসপাতালে আনার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রিয়ার মৃত্যু হয়। তার ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ভালুকা মডেল থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে রিয়ার শাশুড়িকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার স্বামী প্রবাসে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।