বরিশাল-২
এমপি শাহে আলমকে উপজেলা আ’লীগের শোকজের নেপথ্যে

সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম। ফাইল ছবি
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:২৮ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ | ২৩:২৮
বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের বিরুদ্ধে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শোকজ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। প্রচলিত দলীয় রীতি লঙ্ঘন করে এ পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে তাঁর দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ঠেকানোর পরিকল্পনার অংশ এই শোকজ।
শাহে আলমের বিরুদ্ধে ১৭টি অভিযোগ তুলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। তিনিও কমিটির সদস্য। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব অভিযোগ এনে নোটিশ দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
বানারীপাড়া-উজিরপুর নিয়ে এ আসন গঠিত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই উপজেলার আওয়ামী লীগে শীর্ষ পদধারীরা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর অনুসারী। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এমপি শাহে আলমের সঙ্গে দু্ই উপজেলায় হাসানাত অনুসারী নেতাদের দূরত্ব চলছে। আবুল হাসানাত বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। হাসানাত অনুসারী স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বিরোধের জেরে গত বছর সেপ্টেম্বরে দলীয় পদ হারান বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের পঙ্কজ দেবনাথ এমপি। দলীয় পদ হারানোয় রাজনৈতিক সংকটে পড়েন পঙ্কজ। এমপি শাহ আলমকে একই ফাঁদে ফেলার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৯ আগস্ট বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় শাহে আলমকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়। নোটিশে স্বাক্ষর করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলাদ হোসেন সানা। ১৫ দিনের মধ্যে এমপিকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে মাওলাদ হোসেন সমকালকে বলেন, বর্ধিত সভায় এমপি শাহে আলম উপস্থিত ছিলেন। তখন নেতাকর্মীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন। সভাতেই তাঁকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়। নির্বাচনের আগে অভিযোগগুলো কেন সামনে আনা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপির সঙ্গে তাদের সবসময় বসা হয় না। ২৯ আগস্ট বর্ধিত সভায় এমপি উপস্থিত থাকলে তাঁর উপস্থিতিতেই অভিযোগগুলো তোলা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহে আলমের পাশাপাশি জেলার সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, বানারীপাড়া উপজেলা সভাপতি গোলাম ফারুক, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাতি ফাইয়াজুল হকসহ অন্তত ১০ জন আসন্ন নির্বাচনে বরিশাল-২ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের বেশির ভাগই হাসানাত অনুসারী হিসেবে পরিচিত। হাসানাত-পুত্র আশিক আবদুল্লাহও এ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে গুঞ্জন রয়েছে। শাহে আলমকে শোকজ করার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের যোগসূত্র রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুসও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এমপির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
শোকজ নোটিশে এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগের উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে– উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণে ৫৬ লাখ টাকা হস্তগত করে রাখা, নিজস্ব বলয় তৈরি করে পৃথকভাবে শোক দিবসের কর্মসূচি পালন, চাচাতো ভাই নুরুল হুদাকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা, নিজ বাহিনী দিয়ে যুবলীগ নেতা আতিক বাপ্পীকে হাতুড়িপেটা, অনুসারী দিয়ে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ফাইয়াজুল হককে গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখানো, দলীয় কার্যালয়ের চাবি কুক্ষিগত করে কার্যালয় দীর্ঘদিন অচল করে রাখা, এমপির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে উপজেলা মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু না হওয়া, বালিকা বিদ্যালয়ের নামে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার জমি দখল, উন্নয়নকাজে ৫ ভাগ হারে কমিশন আদায়, সরকারি খাল দখল করে নিজের বাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ, আত্মীয়স্বজনের নামে ঠিকাদারি কাজ বরাদ্দ এবং বিভিন্ন উৎসব পালনের নামে চাঁদাবাজি।
এসব অভিযোগ ও শোকজ প্রসঙ্গে শাহে আলম জানান, তিনি কোনো নোটিশ পাননি। তাছাড়া একজন এমপিকে শোকজ করতে পারে পার্লামেন্ট। তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলবেন না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের চারজন সহসভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েক নেতা সমকালকে বলেন, ২৯ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বর্ধিত সভা হয়। সভায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ হলেও রাতে ভোজ ও কোলাকুলি করে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সভা শেষ হয়। সেখানে শোকজ-সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন বিশেষ কোনো ব্যক্তি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এমপিকে শোকজ নোটিশ দিতে পারেন। এর সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সবাই একমত নন। তারা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকেন ঢাকায়, সাধারণ সম্পাদক থাকেন বরিশালে। এমপি শাহে আলম প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকাকে জয়ী করার জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
- বিষয় :
- বরিশাল-২
- সংসদ সদস্য
- আওয়ামী লীগ
- শোকজ