কৌশল বদলে সক্রিয় চরমপন্থিরা

এমএ এরশাদ, ডুবুরিয়া (খুলনা)
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ | ০৯:০৭
খুলনার ডুমুরিয়ায় আবারও সক্রিয় শতাধিক চরমপন্থি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ও পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে তারা প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এমনকি এমপি থেকে শুরু করে থানার ওসিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ভূরিভোজ করাচ্ছে একসময়ের দাগি এসব আসামি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চরমপন্থিরা রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিলে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল গনি বলেন, ‘উপজেলার শোভনা, ধামালিয়া, আটলিয়া, শরাফপুর, মাগুরখালী, ভান্ডরপাড়া, খর্নিয়া, গুটুদিয়া, রংপুর ও রুদাঘরা ইউনিয়ন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। অনেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতাকে ম্যানেজ করে পদও পেয়েছে। অপকর্মের মাধ্যমে দলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা ভারতে গা-ঢাকা দেওয়া সহযোগীদেরও ফেরাচ্ছে।’সূত্র জানায়, এরই মধ্যে চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির একসময়ের সদস্য বিশ্ব দেবনাথ, মোস্তফা গাজী ওরফে মোস্ত ডাকাত, সিদ্দিকুর রহমান, রতন আলী, নজরুল ইসলাম, আজিম গাজী, সঞ্জয় দেবনাথ, বিপ্লব বৈদ্য, কুমারেশ বৈদ্য, মিলন গাজী, পরিমল, সুজন, আজাহারুল গাজী, মাইকেল, শেখর, গোপাল চন্দ্র দে, শিবপদ, নাছির মোল্লা, শহিদুল, ছাত্তার, চিত্ত, কনেক, শলুয়ার প্রতাপ, নিউটন, আশিষ কুণ্ডু, নুরুজ্জামান, সুকৃতি, গোস্টসহ অনেকে প্রকাশ্যে এসেছে।
ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় কর্মকাণ্ড করছে। যদিও উপজেলার গুটুদিয়ার গ্রামের মোস্তফা গাজী ওরফে মোস্ত ডাকাতের দাবি, তিনি এখন তাঁতী লীগ করছেন। একসময় আসামি থাকলেও, এখন কোনো মামলা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি ডুমুরিয়া থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী শিমুল বিশ্বাসের বাড়িতে ভূরিভোজ করেন থানার ওসি কনি মিয়া। এ ছাড়া খুলনা-৫ আসনের এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ দাওয়াত খান ‘যুদ্ধাপরাধী’ উপজেলার সাহস জয়খালী গ্রামের লতিফ সরদারের বাড়িতে। শিমুল বিশ্বাস উপজেলার সাংবাদিক নহর আলী, শুকুর সরদার, যুবলীগ নেতা শেখ কবিরুল ইসলাম ও যুবদল নেতা মোল্লা সিরাজুল ইসলাম হত্যার মামলার আসামি ছিলেন। তবে এখন যুবলীগ নেতা। শিমুল বিশ্বাসের দাবি, ‘দাওয়াত দিয়েছিলাম, ওসি এসেছিলেন। এতে সমস্যার কী আছে? পরিস্থিতির শিকারে আসামি হয়েছিলাম। এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি। কোনো মামলা নেই।’
স্থানীয় একাধিক ঠিকাদার, ইটভাটা ও চিংড়ি ঘেরের মালিক জানান, সন্ত্রাসীদের নিয়মিত চাঁদা দিলেও ভয়ে কিছু বলতে পারছি না। কারণ, প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গেও তাদের দহরমমহরম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ভারতে পলাতক যাবজীবন সাজাপ্রাপ্ত দেবু প্রসাদ দেবু ডুমুরিয়ায় নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টিকে সংগঠিত করছেন। বেশ আগে থেকেই তিনি ডুমুরিয়ায় শতাধিক সহযোগীকে মাঠে নামিয়েছেন। আওয়ামী লীগে ভিড়ে তাদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ হোসেন জোয়াদ্দার বলেন, ‘শিমুল, চঞ্চল, মোস্তফা গাজী আওয়ামী লীগের কেউ না। বিশেষ এক নেতার প্রশ্রয়ে তাদের মতো প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী যুবলীগ, তাঁতী লীগ নেতা বনে গেছে।’
উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ কুমার রায় বলেন, ‘আমাদের কতিপয় নেতার মাধ্যমে চরমপন্থিরা প্রভাব বিস্তার করছে। অনেকে দলে ভিড়ে জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। এখন নদী-খাল, সরকারি জমি দখলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা কামাল খোকন বলেন, ‘এখনই সতর্ক না হলে জাতীয় নির্বাচনে বিপদ বাড়বে। নৌকার ভরাডুবি হতে পারে।’ এদিকে ডুমুরিয়ায় বেড়ে গেছে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মাদক কারবার। সঙ্গে অবাধে চলছে সরকারি নদী-খাল ও জমি দখল। গত ৩ আগস্ট গুটুদিয়া ইউনিয়নের জিলেরডাঙ্গা গ্রামে শিল্পপতি প্রফুল্ল কুমার রায়ের বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে দুর্বৃত্তরা। সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার বরাতিয়া গ্রামে আবুল সরদার ও আবু রায়হানের বাড়িতে ডাকাতি হয়। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ তারা প্রায় ৬ লাখ টাকার মালপত্র লুট করে নিয়ে যায়। গৃহবধূ নাসরিন নাহার গুরুতর জখম হয়ে এখনও হাসপাতালে।
জানতে চাইলে ডুমুরিয়া থানার ওসি কনি মিয়া বলেন, ‘চরমপন্থি ও সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়েছে– এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের ওপর সব সময় পুলিশের নজরদারি থাকে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বিতর্কিত কারও বাড়িতে দাওয়াত খাইনি।’
এমপি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘আমার কাছে সন্ত্রাসীদের কোনো স্থান নেই। এখন যারা আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন, তারা অন্ধকার জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।’