ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

নদীতে বাঁধ দিয়ে পুকুর ইউপি চেয়ারম্যানের

নদীতে বাঁধ দিয়ে পুকুর ইউপি চেয়ারম্যানের

খোকসার চর দশকাহুনিয়া-চর বিহারিয়া সেতুর পশ্চিম পাশে হাওড় নদীতে বাঁধ দিচ্ছেন শ্রমিকরা। ছবি: সমকাল

খোকসা (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:৫৩ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | ২১:৫৩

কুষ্টিয়ার খোকসার সিরাজপুর হাওড় নদীতে বাঁধ দিয়ে পুকুর তৈরির অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এতে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। 

গড়াই নদীর প্রধান শাখা এই হাওড় নদী। ভরাট আর দখলদারদের কবলে পড়া নদীটি ছোট হয়ে খালে পরিণত হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে নদীর উৎসমুখ থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার খনন করা হয়। খননে ব্যয় হয় ৫৩ লাখ টাকা।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হাওড় নদী পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির কর্মকর্তাদের পাশ কাটিয়ে জানিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মজিদ নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের কথা বলে তিন স্থানে মাটি ও বাঁশ দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন। এসব বাঁধ একতারপুর হাটের সেতুর নিচে একটি, চর বিহারিয়া সেতুর নিচে একটি এবং উপজেলার গ্রামের দশকাহুনিয়ায় মৃত শহীদ মেম্বারের বাড়ির পাশে একটি রয়েছে। 

নদীতে বাঁধ দেওয়ায় বর্ষা মৌসুমে জানিপুর ও বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেতবাড়িয়া, কমলাপুর, একতারপুর, ঈশ্বরদী বিহারিয়া, দশকাহুনিয়াসহ নদী তীরের প্রায় ১০টি গ্রামের কৃষি জমির চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেরা পরিবার নিয়ে কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন।  

সরেজমিন হাওড় নদীর চর দশকাহুনিয়া ও চর বিহারিয়ার কাছে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শ্রমিক নদীতে বাঁধ দিচ্ছেন। বৃদ্ধ শ্রমিক বাঁধের মাথায় বাঁশের চড়াট তৈরি করছিলেন। 

বাঁধের কাজের শ্রমিকরা জানান, চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন নাসির ও শিশির নামের দু’জন। তারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার। 

বেতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা একটি কলেজের অধ্যাপক মোক্তার হোসেন সরদার বলেন, চেয়ারম্যান মাছ চাষের ধুয়া তুলে নদীর একাধিক স্থানে বাঁধ দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। আবার খরা মৌসুমে পানির সংকট চরম আকার ধারণ করবে। ফলে নদী তীরের কয়েক হাজার একর জমির চাষাবাদ ব্যাহত হবে। 

হাওড় নদী পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দিবাকর সরকার বলেন, নদীতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। যারা নদীতে বাঁধ দিচ্ছেন তারা কেউ অনুমতিও নেয়নি।   

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মজিদের সঙ্গে কথা বলতে দু’দিন ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোন দিয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন বলে জানান। তবে পরে আর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

সাবেক মেম্বার নাসির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘বাঁধ না দিলে নদীতে পানি থাকে না। তাই বাঁধ দিয়ে পানি আটকে মাছের পোনা ছাড়া হচ্ছে। চেয়ারম্যান সমিতির লোকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারপর নদীতে বাঁধ দিয়েছেন।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারিক আজিজ বলেন, খাল হোক আর নদী হোক– পানির প্রবাহ বন্ধ করার অধিকার কারও নেই। তিনি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।  

ইউএনও রিপন বিশ্বাস জানান, তিনি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেবেন।  


আরও পড়ুন

×