ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

টাঙ্গাইল শাড়ি বিতর্ক

ভারতের দাবি ঘিরে ফুঁসছে টাঙ্গাইল

ভারতের দাবি ঘিরে ফুঁসছে টাঙ্গাইল

প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন। আজ সোমবার টাঙ্গাইলের পাথরাইল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মো. আব্দুর রহিম

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৬:২০ | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৭:০৮

ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত নিজেদের দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে টাঙ্গাইলবাসী। ভারতের এ দাবিকে নাকচ করে দ্রুত টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেলার কারিগর, ব্যবসায়ী ও সুধীজন।

গত বৃহস্পতিবার ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক পোস্টে বলা হয়, টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত একটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত এ শাড়ি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্যসমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন। 

ভারতের এই পোস্ট নজরে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বাংলাদেশিরা। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে জরুরি সভা করে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

‘নদী-চর খাল-বিল গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন’ বলে টাঙ্গাইলবাসী গর্ব করেন। সদর উপজেলার বাজিতপুর, কৃষ্ণপুর, দেলদুয়ারের পাথরাইল, কালিহাতীর বল্লা, রামপুরসহ টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় এ শাড়ি তৈরি হয়। তবে পাথরাইল টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত। পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বল্লা এলাকার সুতা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোস্তফা আশরাফী ও সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান হাসান ভারতের কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই শাড়ির স্বত্ব শুধু টাঙ্গাইলের তাঁতিদের।

পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ভিন্ন মান ও ভিন্ন দক্ষতায় টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হয়। 

এই দক্ষতায় অন্য জায়গায় শাড়ি তৈরি হলেও সেটা টাঙ্গাইল শাড়ি না। অন্যরা টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজের দাবি করে জিআই ট্যাগ নেওয়ার চেষ্টা করছে– এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। তিনি এর প্রতিবাদে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। 

টাঙ্গাইল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ আর্টিজেন্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড এবং বল্লা এলাকার তন্তুবায় সমবায় সমিতির সভাপতি মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের তাঁতি কেউ কেউ ভারতে গিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন। সেখানে তারা আদি পেশা তাঁতশিল্পের কাজ করছেন। তাই বলে টাঙ্গাইল শাড়ি কখনও সে দেশের হতে পারে না। তিনি বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বীকৃতির দাবি জানান।  

টাঙ্গাইল তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইল তাঁত শাড়ির  ইতিহাস ও ঐতিহ্যের তথ্যাদি দিয়ে তাঁত বোর্ড খুব দ্রুত এ বিষয়ে আপিল করবে।  

জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি আড়াইশ বছরের পুরাতন। এ শাড়ি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে টাঙ্গাইল শাড়ি সরকার কর্তৃক ব্র্যান্ডিং হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে কীভাবে আবেদন করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া জিআই স্বীকৃতির জন্য আপিলের সুযোগ থাকলে অবশ্যই তা করা হবে।

আরও পড়ুন

×