সম্পদে এগিয়ে সাক্কু-সূচনা, মামলায় এগিয়ে কায়সার
কুসিক মেয়র পদে উপনির্বাচন

.
কামাল উদ্দিন, কুমিল্লা
প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:৩১ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১২:৫০
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র পদে উপনির্বাচনে চার প্রার্থীর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদে এগিয়ে আছেন দু’বারের সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কু এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা। আর মামলা বেশি নিজাম উদ্দিন কায়সারের বিরুদ্ধে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া যায়।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, এসএসসি পাস মো. মনিরুল হক সাক্কু পেশায় ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া ১২টি মামলার মধ্যে দুটি বিচারাধীন, আর ১০টিতে খালাস পেয়েছেন তিনি। তাঁর আয়ের উৎস বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ও দোকান ভাড়া। এসব থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তবে তাঁর নির্ভরশীলরা এই খাত থেকে বছরে আয় করেন ৪০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে নিজের আয় না থাকলেও নির্ভরশীলরা বছরে আয় করেন ২৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া শেয়ার, সঞ্চয়পত্র থেকে সাক্কুর আয় ২ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তাঁর নগদ আছে ৩৪ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর হাতে নগদ আছে ২ কোটি ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার ৩৪৪ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাক্কুর জমা আছে ৪৩ হাজার ২৯ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ১০৯ টাকা। স্ত্রীর নামে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ১৬৫ টাকার পোস্টাল ও সঞ্চয়পত্র রয়েছে। বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা সাক্কুর রয়েছে একটি ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি। স্ত্রীর নামেও একটি গাড়ি রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর স্বর্ণ রয়েছে ১০ তোলা করে, যার অর্জনকালীন মূল্য ১ লাখ টাকা।
সাক্কু হলফনামায় লিখেছেন, তাঁর স্থাবর সম্পদ রয়েছে জেলার সদর দক্ষিণের শরীফপুর মৌজায় ২০ একর এবং লালমাই মৌজায় ২৫০ শতক (কৃষিজমি ও পুকুর)। এ ছাড়া ঢাকার মধুমতি, বসুন্ধরা ও স্বদেশ প্রপার্টিজের চারটি স্থানে ১৮ কাঠা জমি রয়েছে। এ ছাড়া কুমিল্লা নগরীর বজ্রপুরে ২৩ শতক জমি রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর নামে ঢাকার বসুন্ধরায় রয়েছে ৩ কাঠার প্লট ও ধানমন্ডির অরচার্ড পয়েন্টে আছে ৫টি দোকান। কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় নিশা টাওয়ারে আছে বেশ কয়েকটি দোকান, রেস্ট হাউস, রেস্টুরেন্টসহ বেশ ২টি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া নগরীর বজ্রপুর এলাকায় স্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট রয়েছে ১৭টি। ঢাকার গুলশান মডেল টাউনেও ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে এসব সম্পদের মূল্য দেখানো হয়নি।
অপর প্রার্থী ডা. তাহসিন বাহার সূচনা কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের জ্যেষ্ঠ কন্যা। তাঁর কোনো দায়দেনা নেই। ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত রয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকার। তাঁর নগদ রয়েছে ৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৯১০ টাকা। নাইস পাওয়ার অ্যান্ড আইটি লিমিটেডে আছে ৮ লাখ, সোনালী সুটস লিমিটেডে ২৫ লাখ, ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১৫ লাখ, এমবি টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্যাক্টরিতে ৪ লাখ, গোমতী ডিস্ট্রিবিউশনে ১০ লাখ, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতের বিনিয়োগে আছে ১ কোটি ৫ লাখ, গাড়ি ৯১ লাখ ৫০ হাজার, ১ লাখ টাকার (অর্জনকালীন সময়ের মূল্য) ৪০ তোলা স্বর্ণ, ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ১ লাখ টাকার আসবাব ও অন্যান্য ব্যবসায় ৫ লাখ টাকার পুঁজি রয়েছে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে ঢাকার উত্তরায় ৪২ লাখ টাকার একটি ফ্ল্যাট। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা নেই।
মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বি.কম পাস বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তিনি মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন। কুসিকের গত নির্বাচনে বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করায় দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনের শ্যালক। তাঁর নগদ আছে ৩২ লাখ ৪০ হাজার ৩৭ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৭২০ টাকা। বন্ড ও সঞ্চয়পত্র আছে ৪০ হাজার টাকার, নিজ নামে স্বর্ণ আছে ৩০ তোলা ও স্ত্রীর নামে আছে ২০ ভরি। নিজ নামে ইলেকট্রনিকস সামগ্রী আছে ১ লাখ ৯ হাজার টাকার ও স্ত্রীর নামে আছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার আসবাব আছে। তাঁর বিরুদ্ধে ৯টি মামলা বিচারাধীন। এ ছাড়া ৪টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। ২টির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।
এই উপনির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম স্নাতক পাস। তাঁর পেশা ব্যবসা। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভিপি ছিলেন। বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য। ৪টি মামলা থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। হলফনামা অনুযায়ী তাঁর বার্ষিক আয় ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নামে নগদ আছে ২ লাখ ও স্ত্রীর নামে ১ লাখ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২০ হাজার ও স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ২০ ভরি স্বর্ণ, টিভি, ফ্রিজ, খাট, সোফাসহ বিভিন্ন আসবাব থাকলেও মূল্য দেখানো হয়নি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে যৌথ মালিকানার ২ শতক ও স্ত্রীর নামে ৮ শতক অকৃষি জমি আছে। দায়দেনার মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংকে তাঁর ৩০ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে।
- বিষয় :
- কুমিল্লা সিটি করপোরেশন